চলতি বছরেই শুরু হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের নতুন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩, ০৮:১৭ পিএম

ঢাকা: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাজের বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনের জন্য অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স অ্যাপ্রেইজাল রিপোর্ট-এপিএআর অনলাইন পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক চালু করতে যাচ্ছে সরকার। 

চলতি বছরেই গত ৩০ বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসা বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন-এসিআর এর পাশাপাশি নতুন এই পদ্ধতি চালু করা হবে। 

গত ২৪-২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব আমলে নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইন সিস্টেম চালু হলে প্রত্যেক কর্মকর্তা নিজেকে নিজেই মূল্যায়ন করতে পারবে। এর ফলে প্রশাসনে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। এসিআর ফরম পরিবর্তনের পরও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারা অধস্তনদের নানা হয়রানির ঘটনা ঘটছে। 

এসিআরের যে মানদণ্ডভিত্তিক নম্বর বিভাজন রাখা হয়েছে। সেই নম্বর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের ইচ্ছামতো দিয়ে থাকেন। এসিআরের এই মূল্যায়ন করা হয় সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যেসব অধস্তন কর্মকর্তার সম্পর্ক ভালো তারা ৯৫ থেকে ১০০ নম্বর পেয়ে থাকেন। 

যেসব জুনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভালো সম্পর্ক নেই তাদের ৬৯ নম্বর বা তার নিচে (চলতি মানের নিচে) দেওয়া হয়। এর ফলে অনেকেই প্রশাসনে স্বাধীনভাবে কোনো কাজ করতে পারেন না। পদন্নতি ও পদায়নসহ নানা ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হন তারা।

সম্মেলনের তৃতীয় দিবসের অষ্টম কার্যঅধিবেশনে পিরোজপুর ও ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে বরাদ্দকৃত অর্থে উন্নয়ন প্রকল্পের আয়ন-ব্যয়ন ক্ষমতা জেলা প্রশাসকদের প্রদান করার প্রস্তাব দেন। 

জামালপুরের জেলা প্রশাসক বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনে আবাসিক কার্যালয়ের টিওএন্ডই সংশোধনপূর্বক সন্ধ্যাকালীন অফিস পরিচালনার জন্য নতুন পদ সৃজন করা যেতে পারে। চট্রগ্রামের জেলা প্রশাসক বলেন, চট্টগ্রাম জেলার বন্দর থানার চান্দগাঁও (বন্দর) মৌজার বিএস ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ১২১ দাগের ৭৩.৪২ একর ভূমি এবং পাশ্ববর্তী চর রাঙ্গামাটিয়া মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানভূক্ত বিএস ৩ নম্বর দাগে ১.৩৯ একর খাস জমিসহ সর্বমোট ৭৪.৮১ একর ভ‚মির ওপর সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ করা যেতে পারে।
 
বান্দরবান পার্বত্য জেলা প্রশাসক বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জলোর জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে পাহাড়ী এলাকায় চলাচল উপযোগী গাড়ি প্রদান করা যেতে পারে। 

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক বলেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার দুর্গম উপজেলাসমূহের উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের অনুকূলে স্পিডবোট প্রদান করা প্রয়োজন। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ট্রেজারি ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন।
 
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, পদায়ন নীতিমালা অনুসরণ করে বর্তমানে মাঠ প্রশাসনে শূন্য পদের বিপরীতে পদায়ন সন্তোষজনক। মাঠ পর্যায়ে পদায়িত কর্মকর্তাদের আবশ্যিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য যথাসময়ে অবমুক্ত করা না হলে তাদের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ব্যাহত হবে। 

আইন ও প্রশাসন কোর্স সম্পন্ন না করলে কর্মকর্তাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে পদায়ন করা সম্ভব হয়না এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত ব্যক্তি এই নীতির অনুসরণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের পদায়ন নিশ্চিত করছে। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, জেলাপ্রশাসক সম্মেলন ২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ২৫ (পঁচিশ) দফা নির্দেশনা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের উপর জোর তৎপরতা চালাতে হবে। 

তিনি জাতির পিতাকে উদ্ধৃত করে বলেন, সরকারি কর্মচারিগণ জনগণের সেবক ও খাদেম, তাই তাদেরকে সর্বাগ্রে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। সেবা করার মানসিকতা নিয়ে জনগণের চাহিদা অনুধাবন করাই স্মার্টনেস।
 
জনপ্রতিনিধিদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে জেলা প্রশাসকদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের উপর গুরুত্ব দেন তিনি। 

জেলায় সেবাধর্মী অফিস, যেমন: পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ, কমিউনিটি ক্লিনিক, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে সেবার মানোন্নয়নের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন। 

তিনি জনমুখী জনপ্রশাসন গড়ার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকগণের আরও বেশি জনসম্পৃক্ত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

সোনালীনিউজ/এআর