চীনে বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইলেন রাষ্ট্রপতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০১৬, ১০:১৫ পিএম

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটির বাজারে বাংলাদেশের সব পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রাষ্ট্রপতি হামিদ এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন পরে বৈঠকের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, আমাদের অনুরোধ থাকবে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চীনের বাজারে বাংলাদেশের সব পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। চীনের প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে বলেছেন, তার দেশে যাতে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পায় সে বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।

বৈঠকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, পঞ্চাশের দশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা হয়। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের ‘সর্বাÍক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা’র সেই সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতায়’ পৌঁছে যাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

বঙ্গভবনের কেবিনেট হলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন,  চীনের যেমন ‘চায়নিজ ড্রিম’ আছে বাংলাদেশেরও আছে ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’।

প্রেস সচিব আরও জানান, রাষ্ট্রপতি হামিদ দুই দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, একে অন্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা এবং সমতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকেই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ‘মূল ভিত্তি’ হিসেবে তুলে ধরেন; ‘এক চীন’ নীতিতে বাংলাদেশের সমর্থনের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।

চীনকে বাংলাদেশের ‘বড় ব্যবসায়িক অংশীদার’ অভিহিত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং টেলিযোগাযোগে চীনের সহযোগিতাকে বাংলাদেশ মূল্য দেয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়লেও দুই দেশের বাণিজ্যে এখনো বড় ঘাটতি রয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ যেখানে ৮০ কোটি ডলারের পণ্য চীনে পাঠিয়েছে, সেখানে আমদানি করেছে ৯৬৫ কোটি ডলারের পণ্য।

প্রেস সচিব জানান, চীনা প্রেসিডেন্ট শি ছয় বছর আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ সফরের কথা বৈঠকে স্মরণ করেন এবং এই সময়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশংসা করেন।

বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বর্ণনা করে শি জিনপিং বলেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪১ বছর চলছে। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, কৃষি, শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক আরো সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলেও মত দেন চীনের প্রেসিডেন্ট।

প্রেস সচিব বলেন, উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে চীন বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দেন শি জিনপিং।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গভবনের বৈঠকে শি বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একটি মাস্টারপ্ল্যান করতেও দুই দেশে একমত হয়েছে।’

এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে রাষ্ট্রপতি হামিদের সঙ্গে ছিলেন।

দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে শি জিনপিং তাঁর সম্মানে আবদুল হামিদের দেয়া নৈশভোজে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নৈশভোজে উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম