শনিবার (১৮ অক্টোবর) ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডসহ গত এক দশকে পাঁচবার আগুনের ঘটনায় সংবাদ শিরোনাম হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কিন্তু এবারের ঘটে যাওয়া ভয়াবহ আগুনটি ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়েছে। আগুনের পর থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে এই ঘটনা যে বিমানবন্দরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্গো সেকশনে ঘটল—এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক-ফোকরকে সামনে আনছে।
এর আগে এমন ধরনের আগুনের ঘটনা তেমন ক্ষতি করতে না পারলেও এবার ধারণা করা হচ্ছে, কার্গো ভিলেজে থাকা পণ্যগুলোর অধিকাংশই পুড়ে গেছে, যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা হতে পারে। এ ঘটনা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে।
আগের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো
২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল: বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনের কুরিয়ার সার্ভিস গুদামে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেই সময় আগুনের কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয় একটি তদন্ত কমিটি।
২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর: বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের দফতরে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তবে দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলায় বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো যায়।
২০১৭ সালের ১১ আগস্ট: ২ নম্বর টার্মিনালে আরেকটি আগুনের ঘটনা ঘটে, যা এয়ার ইন্ডিয়া অফিস থেকে শুরু হয়েছিল।
২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর: নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে আগুন ধরে যায়, যা ৪০ মিনিটের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
১৮ অক্টোবরের ভয়াবহ আগুন
শনিবারের আগুন ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ, কারণ এটি কার্গো ভিলেজে ঘটেছিল, যেখানে বিমানবন্দরের প্রধান পণ্য এবং আমদানিকৃত মালামাল সংরক্ষণ করা হয়। ৭ ঘণ্টা ধরে ৩৭টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করে। সেই সময় বিমানবন্দরের ফ্লাইট ওঠানামাও বন্ধ ছিল। এই আগুনে হতাহতের ঘটনা না হলেও, কার্গোতে থাকা সমস্ত পণ্য পুড়ে গেছে, যা বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন
এই ধরনের বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা বা প্রস্তুতির অভাবকেই সামনে আনে। এর পাশাপাশি, মালামাল সংরক্ষণ এবং দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আধুনিক ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষণ আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিশেষত, কার্গো সেকশনে আগুন লাগার ঘটনা যেমন সমস্যার সৃষ্টি করেছে, তেমনি এটি বিমানবন্দরের কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
যেহেতু এই বিমানবন্দর দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর, তাই ভবিষ্যতে যাতে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, তার জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর নিরাপত্তা এবং প্রস্তুতির প্রয়োজন।
এম