হাসিনাকে কনডেম সেলে না দেখা পর্যন্ত এই রায় অপূর্ণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ০২:৩৩ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রয়াত জামায়াত নেতা মীর কাসেমের মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া বলেছেন, ‘হাসিনাকে কনডেম সেলে না দেখা পর্যন্ত এই রায় আমার কাছে অপূর্ণ।’

সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায় ঘোষণা পর রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এই মন্তব্য করেন মীর কাসেম কন্যা।

সুমাইয়া রাবেয়ার পোস্টটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো- 

‘আব্বুর রায় ঘোষণার দিন। আমি তখন সদ্য conceive করেছি, প্রথম সন্তান, জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। সেই সময় আব্বুর বাড়ি আর শ্বশুরবাড়িতে পুলিশের রেইড। ভাইয়েরা পালিয়ে পালিয়ে দূরে কোথাও লুকিয়ে আছে। এত অস্থিরতার মাঝেও আমার conceive করার খবরটা ছিল আমাদের ঘরে একমাত্র আলোর ঝলক।’

‘আব্বুও সেই ভয়াবহ সময়ে আরমান ভাইয়াকে নিয়ে আমার জন্য দোয়া করেছিলেন। আরমান ভাইয়া, যেহেতু আব্বুর ল’য়ার, তাই স্বাভাবিক ভিজিটেশনের বাইরে গিয়েও দেখা করতে পারতেন। এদিকে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছিল। চারদিকে সবাই সান্ত্বনা দিচ্ছিল; মীর কাসেম তো সরাসরি রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। আর ’৭১ সালে তার বয়স ছিল মাত্র ১৯। তাকে চট্টগ্রামের “মাস্টারমাইন্ড” বলা, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সব বাহিনী তার অধীনে চলত—এসবই ছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’

‘যাই হোক... মনে মনে ভাবছিলাম, ফাঁসি হবে না ইনশাআল্লাহ। আজীবন হলেও অন্তত আব্বুকে দেখতে পাবো, তার দোয়া পাবো। কিন্তু আমাদের সেই সামান্য আশাটুকু পর্যন্ত মুছে গেল ফাঁসির রায়ে।’

প্রয়াত জামায়াত নেতা মীর আসেম আলী কন্যা সুমাইয়া রাবেয়ার দেওয়া ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট।
‘আব্বু বের হয়ে বিজয়ের চিহ্ন দেখালেন—Victory sign। কিন্তু আমি তখন pregnant অবস্থায় অতিরিক্ত মানসিক চাপ আর হরমোনের কারণে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। মনে হয়েছিল দুনিয়াটা এক মুহূর্তে উলটে গেল। এরপর তাকে এসি বাস তো দূরের কথা, মুড়ির টিনের মতো সংকীর্ণ ভ্যানে গাদাগাদি করে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। সরাসরি কনডেম সেলে ঢোকানো হলো।’

‘আরমান ভাইয়া জেলগেট থেকে নড়তেই পারছিলেন না। আব্বুকে ওই কনডেম্নড সেলে রেখে তিনি কীভাবে বাড়ি ফিরবেন? আমরা বারবার ফোন করে ফিরতে বলছিলাম, আর তিনি জেলগেটের সামনে দাড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তার সেই কান্নার শব্দ দু’দিন ধরে আমার কানে বাজছিল। আর সেই অসহ্য কষ্ট আমি আর সহ্য করতে না পেরেৃ আমার বাবুটাকেও হারালাম।’

‘আজ আবার হাসিনার রায় হলো। মানুষের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনার রায়। তার অপরাধের সঙ্গে আজকের সিদ্ধান্ত দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। কিন্তু এত কিছু ঘটার পরও তার জন্য কোনো কনডেম্নড সেল প্রস্তুত নেই। তিনি আরামে কোনো এসি রুমে বসে হাসছেন। তাকে কনডেম্নড সেলে না দেখা পর্যন্ত এই রায় আমার কাছে অপূর্ণ।’

সবশেষে সুমাইয়া রাবেয়া লিখেছেন, ‘এত মানুষের কান্না...এত শোক...যে ফাঁসির আদেশ হয়েছে, একবার তা কার্যকর করেও এসব কষ্ট কখনোই পূরণ হবে না।’

পিএস