বড় ধরনের ভূকম্পন হতে পারে যেসব জেলায়, আছে সর্বোচ্চ ঝুঁকি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৫, ০২:৩৬ পিএম
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকির মানচিত্রে দেশকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে জোন-১ সর্বোচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ, জোন-২ মাঝারি এবং জোন-৩ অপেক্ষাকৃত নিম্ন ঝুঁকির অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকাশিত মানচিত্র বলছে, উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একাধিক জেলা জোন-১-এর আওতায় রয়েছে। ফল্ট লাইন বা প্লেট বাউন্ডারির আশপাশে থাকায় সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নয়টি জেলা, ঢাকার টাঙ্গাইল–গাজীপুর–নরসিংদীর কিছু অংশ, পুরো কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং খাগড়াছড়ি–রাঙামাটির বিস্তীর্ণ এলাকা উচ্চঝুঁকিতে পড়েছে। বিপরীতে খুলনা, যশোর, বরিশাল ও পটুয়াখালীর বড় অংশ জোন-৩, যেখানে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা তুলনামূলক কম।

পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে পাঁচ দফা বড় ধরনের ভূকম্পন অনুভূত হয়, যেগুলোর উৎস ছিল মূলত সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার। এতে বিশেষত সিলেট–ময়মনসিংহ অঞ্চলকে উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়, কারণ এ অঞ্চল ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের সীমান্ত সংলগ্ন। ভূকম্পবিদরা জানান, বাংলাদেশের চারপাশে পাঁচটি বড় উৎপত্তিস্থল রয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত প্লেট বাউন্ডারি–১, নোয়াখালী থেকে সিলেট পর্যন্ত প্লেট বাউন্ডারি–২ এবং সিলেট থেকে ভারতের দিকে প্লেট বাউন্ডারি–৩ বিস্তৃত। পাশাপাশি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্টও সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে, যা ভূমিকম্পের মূল উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।

রাজউকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকায় প্রায় ২১ লাখ ভবন আছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ভবন দুইতলা বা কম, যেগুলো তুলনামূলক কম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে চার থেকে ৩০ তলা পর্যন্ত বাকি প্রায় ৬ লাখ ভবন ভূমিকম্পে উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। বড় ভূমিকম্পে এ ধরনের ভবন ধসে পড়লে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরে বিল্ডিং কোড যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সংস্কারের মাধ্যমে সহনশীল করে না তুললে ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্পকে সবচেয়ে অনিশ্চিত ও ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা হয়। এটি প্রতিরোধের ক্ষমতা কারও হাতে নেই, তাই ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আগাম সতর্কতার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস গবেষণায় দীর্ঘদিন ধরে বিপুল বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশের ভূমিকম্প সক্ষমতা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ বহু আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে এবং সাম্প্রতিক ভূকম্পন মানুষের আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে। মাত্র ৫ দশমিক ৭ মাত্রার কম্পনে ঢাকার ৬০ কিলোমিটার দূরে উৎপত্তিস্থল থাকা সত্ত্বেও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রমাণ করে যে বড় ভূমিকম্প হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই এখনই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে সংস্কার এবং বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

এসএইচ