বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে ধর্মের নাম ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী বিভাজনের পথ তৈরি করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে থাকার যে ভিত্তির ওপর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেটিকেই ভাঙার অপচেষ্টা চলছে। এসব বিভাজন রোধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে দেশ গড়ার পরিকল্পনার কর্মসূচির আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দুপুরে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে বিএনপির অতীত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়েও কথা বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাংলাদেশের মানুষের জীবনের অংশ হলেও ধর্মকে ব্যবহার করে সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি মনে করিয়ে দেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছিল সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের অভিন্ন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই।
তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে দেশ আবারও পথ খুঁজে পেতে পারে। ‘সবার আগে বাংলাদেশ’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে বাংলাদেশের পরিচয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেন তিনি। তাঁর মতে, ছাত্রদল এই পরিবর্তনের অগ্রভাগে থাকা উচিত, কারণ তরুণদের শক্তিই বড় রাজনৈতিক যাত্রাকে সফল করতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অতীতে দলটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের যে পথ তৈরি করেছে, সেগুলোই সময়ের সঙ্গে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রব্যবস্থাকে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে রূপান্তর করেছিলেন এবং মেয়েদের শিক্ষার ভিত্তি সুদৃঢ় করেছিলেন। সাইফুর রহমান রাজস্ব আহরণে যোগ করেছিলেন ভ্যাট পদ্ধতি—যা আজ কার্যকর করনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
তিনি বলেন, ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের পর দেশে গণতন্ত্রে ফেরার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে চলছে অপপ্রচার ও সাইবার আক্রমণের নতুন যুদ্ধ। এই যুদ্ধে তরুণদের এগিয়ে আসতেই হবে, না হলে পিছিয়ে পড়বে দল ও রাজনীতি।
ছাত্রদলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু বক্তব্য শুনে হলে হবে না, প্রতিটি বক্তব্যকে হৃদয়ে ধারণ করে এলাকায় ছড়িয়ে দিতে হবে। বিএনপির ৩১ দফা বা দেশ গড়ার পরিকল্পনা—যে কোনো কর্মসূচি মানুষের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতে না পারলে তার প্রভাবও তৈরি হবে না।
তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করতে হবে। এ জায়গায় দুর্বলতার কারণে অতীত নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি, তাই ভবিষ্যতের লড়াইয়ে সংগঠনকে আরও দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ও দেশ গড়ার পরিকল্পনা কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। বিকেলে অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এসএইচ