বুধবার জেলা পরিষদ নির্বাচন

‘অনিয়ম করলে ছাড় দেয়া হবে না’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬, ১২:৪২ পিএম

স্থানীয় সরকারের জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল (২৮ ডিসেম্বর) বুধবার। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। দেশে প্রথমবারের মতো এ নির্বাচনে স্থানীয় সরকারের সিটি, পৌর, উপজেলা ও ইউপি জনপ্রতিনিধিরাই কেবল ভোট দেবেন।

এই নির্বাচন উপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা না হলেও ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত স্থাপনাগুলোর সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে গতকাল (২৬ ডিসেম্বর) সোমবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো ভোটার ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া  ভোটের দিন মন্ত্রী ও এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া ও অবস্থান করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইসি। আর ব্যালটে মার্কিং সিলের বাইরে অন্য কোনো চিহ্ন রাখলে ওই ব্যালটটি বাতিল করা হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে কিছু প্রার্থী ও সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা (এমপি) নানাভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ ধরনের কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। প্রার্থীরা কেউ কেউ ভোটারদের বলছেন ক্যামেরায় ছবি তুলে আনতে, কেউ বলছেন ব্যালট পেপারের পেছনে বিশেষ চিহ্ন দিতে। ভোটের আর এক দিন বাকি রয়েছে। সাংসদদের কাছে অনুরোধ করছি- আপনার এলাকা থেকে চলে আসেন। আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে কেউ প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সে যে-ই হোন না কেন, অনিয়ম করলে ছাড় দেয়া হবে না। ভোটকেন্দ্রে যাতে কোনো অনিয়ম না হয়, সে জন্য প্রতিটি ভোটকক্ষের সামনে একজন করে নির্বাহী হাকিম রাখা হবে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার।

তিনি বলেন, কোনো ভোটার বা জনপ্রতিনিধি ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ভোটারকে তল্লাশি করে তা নিশ্চিত করবেন। ব্যালট পেপারের কোথাও পরিচিতিমূলক চিহ্ন ব্যবহার করলে তা বাতিল করা হবে। ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। শাহ নেওয়াজ বলেন, নারায়ণগঞ্জের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে। এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে এ নির্বাচনে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে। কারণ, জনপ্রতিনিধিরা এ নির্বাচনের ভোটার।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। নির্দলীয় এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে অনেক জেলায়। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এ নির্বাচন বর্জন করেছে। এ নির্বাচনে দেশের ৬১ জেলার ৬৫ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। প্রতিটি জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং পাঁচজন সংরক্ষিত কাউন্সিলরসহ ২১ সদস্যের প্রতিনিধি পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। এর মধ্যে ৬১ জেলার ২১টিতেই চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের নির্বাচন আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। তবে এসব জেলা পরিষদে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ চলবে।  

চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৯ জেলায় ১২৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৯৮৫ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮০৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এ নির্বাচনে ভোটারসংখ্যা ৬৩ হাজার ১৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন এবং মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ৮০০ জন। ভোটকেন্দ্র ৯১৫টি ও ভোটকক্ষের সংখ্যা এক হাজার ৮৩০টি। 

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা হলেন- নারায়ণঞ্জে আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরে মো. আখতারুজ্জামান, ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কোরাইশী, জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান রকেট, নাটোরে সাজেদুর রহমান খান, সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, যশোরে শাহ হাদিউজ্জামান, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, ঝালকাঠিতে সরদার শাহ আলম, ভোলায় আব্দুল মোমিন টুলু, নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার রায়, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, দিনাজপুরে আজিজুল ইমাম চৌধুরী, নওগাঁয় এ কে এম ফজলে রাব্বি, ফেনীতে আজিজ আহমেদ চৌধুরী, কিশোরগঞ্জে মো. জিল্লুর রহমান, ঢাকায় মো. মাহবুবুর রহমান, হবিগঞ্জে মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, চট্টগ্রামে এম এ সালাম, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক ও ফরিদপুরে মো. লোকমান মৃধা। তবে কুষ্টিয়ায় রবিউল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর আদালতের আদেশে তা স্থগিত করা হয়।

জেলা পরিষদের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পাহারায় থাকবেন ২০ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এর মধ্যে থাকবেন পুলিশ, আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ব্যাটালিয়ন আনসার ও আনসার-ভিডিপির সদস্যরা। কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে র‌্যাব ও বিজিবি। প্রতিটি উপজেলায় বিজিবির দুটি মোবাইল টিম (প্রতি প্লাটুনে সদস্য ৩০ জন) এবং একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (এক প্লাটুন) থাকবে। আর প্যাট্রোলিং ও স্ট্রাইকিংয়ের দায়িত্বে থাকবে র‌্যাব। এ হিসেবে প্রতিটি উপজেলায় র‌্যাবের দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (প্রতিটি টিমে ১০ জন করে সদস্য)। এ ছাড়া ৯১৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯১ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই