ভূমিকম্প ঝুঁকিতে দেশের ১৪ কোটি মানুষ!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০১৭, ০৯:৪৭ পিএম

ঢাকা: বাংলাদেশের ভূ-গাঠনিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ১৪ কোটি মানুষ। ভয়াবহ রকম ভূমিকম্পে বিপদের মধ্যে পড়তে পারে এসব মানুষ। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের একদল গবেষক এ সতর্কবার্তা দিয়েছে। তাদের গবেষণার এ-সংক্রান্ত তথ্য গেল বছরের ১১ জুলাই নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকদের পূর্বাভাস মতে, সেই উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হলে ক্ষয়ক্ষতি এতোটাই ভয়াবহ হবে যে ঢাকা হয়তো বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। গেল ২০০৪ সালে যে ফল্ট লাইনের ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, সেই একই ফল্ট লাইনে নতুন এই ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষক দলের প্রধান নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ মাইকেল স্টেকলার টমসন জানিয়েছেন, ওই ধরনের ভূমিকম্প কবে ঘটতে পারে, সে পূর্বাভাস আরো গবেষণা না করে দেয়া সম্ভব নয়। ভারতের পূর্ব অংশ ও বাংলাদেশের যে অঞ্চল সম্ভাব্য সেই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, তার ১০০ কিলেমিটার ব্যাসের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বসবাস।

প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম লিখেছে, এখনই বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে এমন কথা বলা না গেলেও দুটি গতিশীল ভূ-গাঠনিক টেকটনিক প্লেট পরস্পরের ওপর চেপে বসতে থাকায় সেখানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে। তেমন কোনো ভূমিকম্প হলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ভবন, ভারী শিল্প, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং গ্যাস ক্ষেত্রগুলো ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে।

টেকটনিক প্লেট

তবে ভূমিকম্পের কোনো পূর্বাভাস ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় সচেতনতা ও প্রস্তুতিকেই সর্বোচ্চ করণীয় বলে মানছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভূমিকম্প নিয়ে কোনো আতঙ্ক নয়, প্রস্তুতিই অগ্রাধিকার। সেইসঙ্গে সচেতনতারও কোনো বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্প ‘হচ্ছে, হবে’ - এ নিয়ে মানুষকে বিচলিত করা যাবে না। ধ্বংসযজ্ঞ হলেও যারা বেঁচে থাকবে তাদের উদ্ধারের জন্য তৈরি থাকতে হবে। এজন্য উপযুক্ত যন্ত্রপাতি কেনা ও যানচলাচলের উপযোগী রাস্তাঘাট রাখতে হবে। বাড়ির আশপাশের জায়গা ছেড়ে দিয়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে; না থাকলে তা তৈরি করে নিতে হবে।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার এ বিষয়ে বলেছেন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ১৯ কিলোমিটার গভীর পলি জমে বাংলাদেশের যে ভূখণ্ড তৈরি হয়েছে, তা সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে জেলাটিনের মতো কেঁপে উঠতে পারে এবং কিছু কিছু জায়গা তরলে পরিণত হয়ে গ্রাস করতে পারে ইমারত, রাস্তাঘাট আর মানুষের বসতি। গবেষণায় প্রায় ৬২ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে এই ভূমিকম্পের ঝুঁকির আওতায় বলা হয়েছে।

অধ্যাপক আখতার বলেন, তেমন মাত্রার ভূমিকম্প সত্যিই হলে তার ক্ষয়ক্ষতি এতটাই ভয়াবহ হবে যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হয়তো বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। ২০০৪ সালে যে ফল্ট লাইনের ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, সেই একই ফল্ট লাইনে নতুন এই ভূমিকম্পের আশঙ্কা দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

ভূমিকম্প মানচিত্র

দশ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি কম্পিউটার মডেল তৈরির মাধ্যমে তারা দেখিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের ভূ-গাঠনিক প্লেট উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের ভূ-গাঠনিক প্লেটে চাপ সৃষ্টি করছে, যাতে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা।

ওই গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা টেকটোনিক প্লেটের ওই সরে যাওয়া জিপিএসের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছেন ২০০৩ সাল থেকে। সেই তথ্য বলছে, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের প্লেট মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের প্লেটকে বছরে ৪৬ মিলিমিটার করে ঠেলছে।

অধ্যাপক আখতারকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই প্লেটের সংযোগস্থলে ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে অন্তত ৪০০ বছর ধরে। ওই শক্তি একসঙ্গে মুক্তি পেলে তা প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে।

মাইকেল স্টেকলার বলেন, এমন একটি বিপদ যে ঘনিয়ে আসছে, সে ধারণা গবেষকদের কারও কারও মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য বা মডেল এতদিন হাতে ছিল না। ‘আমরা জানি না, ঠিক কবে সেই বিপদ আসবে, কারণ আমরা জানি না শেষ কবে ওই এলাকায় এ রকম পরিস্থিতি হয়েছিল। আমরা বলতে পারছি না- এখনই, না ৫০০ বছর পরে সেই ভূমিকম্প হবে। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবে দেখতে পাচ্ছি, ওখানে শক্তি জমা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ৩ জানুয়ারির ভূমিকম্প ছাড়াও গেল দুই বছরে দেশে অন্তত ১২ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

সোনালীনিউজ/এমএন