বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া

অবয়ব ভালো, বিতর্কিত কাউকে নেয়া হয়নি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৭, ১২:৪৬ পিএম

ঢাকা : সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া নতুন নির্বাচন কমিশনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। প্রথমবারের মতো একজন নারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়াকেও তারা স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি ২০১৯ সালের নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, ফার্স্ট লুক বা অবয়ব ভালো, তাদের তেমন কোনো বদনাম নেই, বাকিটা বোঝা যাবে কাজ দেখে। কমিশনের যারা মূল স্টেকহোল্ডার- সেই রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ মানুষই ভালো-মন্দ মূল্যায়ন করবে। সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের আন্তরিকতার ওপর। গতকাল পৃথক প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব কথা বলেন।
  
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কেমন হবে, না হবে, তার সিংহভাগ নির্ভর করে সরকারের ওপর এবং চূড়ান্তভাবে নির্ভর করে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবকটি মহলের ওপর।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, যাদের নিয়ে ইসি করা হয়েছে তাদের তেমন কোনো বদনাম নেই। তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি করেছেন, এর বাইরে তেমন কোনো গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন বলে আমার জানা নেই। বিশিষ্ট নাগরিকরা সার্চ কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়ে বলেছিলেন, নতুন ইসি যেন শক্তিশালী হয়, যেকোনো চাপ ও প্রভাবের মধ্যেও তারা যেন মেরুদণ্ড সোজা রাখেন। তাদের সেই প্রত্যাশা এই কমিশনকে দিয়ে কতটা পূরণ হবে জানি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এক-আধজনকে চিনি। তাছাড়া কমিশন একাই ভালো নির্বাচন করতে পারবে না। সেখানে প্রশাসন, বিশেষ করে ওসি-ডিসি-ইউএনও যদি দলীয় লোক হন তাহলে কমিশনের সমস্যা হবে। এর বাইরে কালো টাকা, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়ও রয়েছে। তারপরেও আমি আশা করি, নতুন ইসি বিদায়ী কমিশনের মতো হবে না।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নতুন ইসি কাজ শুরু করার পর বুঝব কেমন হবে। এখন বিস্তারিত মন্তব্য করা ঠিক হবে না। পাঁচজনের মধ্যে দুজনকে চিনি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী আমাদের সময় দুই থেকে আড়াই বছর ভোটার তালিকা তৈরি প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। আর সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম যদি আমাদের সময়ে কমিশনের অতিরিক্ত সচিব সেই রফিক সাহেব হয়ে থাকেন তাহলে বলব, তারা দুজনই ভালো, দুজনেরই কাজের অভিজ্ঞতা আছে। সব মিলিয়ে তাদের কাজ দেখে মানুষই বলবে খারাপ না ভালো।’  

সাখাওয়াত হোসেন আরো বলেন, ‘নতুন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের লেখা মাঝেমধ্যে পড়েছি। সবাই ভালো। আশা করি তারা ভালো করার চেষ্টা করবেন। তাদের জন্য শুভকামনা থাকল।’

নতুন ইসি সম্পর্কে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘যেহেতু সার্চ কমিটির সুপারিশে আমার নামও ছিল, তাই আমার মন্তব্য করা ঠিক নয়। মানুষই ভালো-মন্দ দিকগুলো মূল্যায়ন করবে। যারা কমিশনে এসেছেন তারা ভালো কাজ করুন। তাছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবে পাঁচজনের কাউকেই চিনি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ফার্স্ট লুক মোটামুটি ভালোই হয়েছে মনে হয়। মনে হয় খারাপ হবে না।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ‘২০১৯ সালের নির্বাচনটা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসা, যেসব দাতাগোষ্ঠী বারবার বলছে, সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন হোক তাদেরও আস্থায় নেয়া। অতীতে আমরা দেখেছি, যারাই প্রশাসন থেকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এসেছেন, আমলাতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে তারা সরকারের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। ফলে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারেন না, ব্যর্থ হন।’

এই নির্বাচন কমিশনকে ‘মন্দের ভালো’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুশীল সমাজের আরো বেশি অংশগ্রহণ থাকলে ভালো হতো।’

প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান বলেন, ‘একটা নির্বাচন পরিচালনা করা প্রশাসনিক কাজ। এখানে খুব বেশি সৃজনশীল কিছু আছে, তা কিন্তু নয়। নির্বাচন পদ্ধতিটা হলো কমিশনের জন্য মূল বিষয়। তাদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যারা এসেছেন তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। তারা কাজটি সমাধা করতে পারবেন বলে আমি আশা করি।’

উল্লেখ্য, গত সোমবার সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদাকে সিইসি করে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হয়েছে। এতে কমিশনার হিসেবে রয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, রাজশাহীর সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই