এতো নির্দেশনা পৃথিবীর কোনও ভাষণে নেই

  • জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০১৭, ০৫:০৫ পিএম

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা, স্বাধীন বাংলাদেশ এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা ছিল। এতো দূরদর্শিতা আর দিক-নির্দেশনা পৃথিবীর কোনও ভাষণে নেই।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ছিল বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির। এজন্য তিনি ছয়দফা দাবি উত্থাপন করেছিলেন। দাবির পক্ষে সমগ্র বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। জনমত গড়ে তুলেছিলেন। ওই ভাষণ ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলে মন্তব্য করেছেন শেখ হাসিনা।

শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ যে উদ্যানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায় সম্প্রতি। এ উপলক্ষ্যে সরকারিভাবে আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সরকারের সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ সমাবেশের আয়োজন করেছে। সরকারিভাবে পালিত এ সমাবেশে সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছেন। এজন্য মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে সব সরকারি অফিসে চিঠি দিয়ে সমাবেশে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

শনিবার বিকেল পৌনে তিনটার দিকে সমাবেশ মঞ্চে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি সকলের উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার মনে পড়ে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের কথা। সেদিনের জনসমুদ্রে আসার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। আমরা এসেছি, ভাষণ শুনেছি। দেখেছি সেদিন বাংলার মানুষের উত্তাল তরঙ্গ।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার মন্ত্রে বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। বাংলার মানুষের সঙ্গে জাতির পিতার আত্মিক সম্পর্ক এ ভাষণে ফুটে ওঠে। তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তিনি গেরিলা যুদ্ধের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এত দূরদর্শিতা, এত দিক-নির্দেশনা পৃথিবীর কোনো ভাষণে পাওয়া যায় না।

যে ভাষণ জাতির পিতা দিয়েছিলেন, সেই ভাষণ আন্তর্জাতিক স্থান করে নিয়েছে। যারা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাদের ধন্যবাদ। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে পুনরায় গড়ে তুলেছিলেন। সাড়ে তিন বছরে যখনই বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দাঁড়িয়েছিল তখন তাকে হত্যা করে দেশকে অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছিল নর পিশাচরা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত আড়াই হাজার বছরের সব ভাষণের মধ্যে এই ভাষণটি স্থান পায়। ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। জাতির পিতার হাতে কোনো নোট ছিল না। কিছুই ছিল না। এই জাতীয় পতাকা জতির পিতার করে দেয়া। বারবার ফাঁসির মঞ্চে নেয়া হয়েছিল তাকে। মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছিল। আন্তর্জাতিক চাপে শেখ মুজিবুরকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা আনন্দিত। এ ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ৪৬ বছর আগের এ ভাষণকে স্বীকৃতি দেয়ায় ইউনেস্কো, তার সাবেক পরিচালক, যারা ভোট দিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

দেশের প্রতিটি অর্জন জাতির পিতার নেতৃত্বে হয়েছে। জাতির জনকের ভাষণেই ছিল স্বাধীনতার মূলমন্ত্র। 

এর আগে সকাল থেকেই বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের লোকজন নিজেদের বিভাগের উপস্থিতি প্রমাণ করতে বিভিন্ন রঙের গেঞ্জি পরে হাজির হয়েছেন সমাবেশে। একইসঙ্গে গেঞ্জির গায়ে লিখেছেন মন্ত্রণালয়, দপ্তরের নাম।

ঢাকার সব স্কুল-কলেজ থেকেও শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছেন সেখানে। বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে মিছিল আসে। বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নেচে-গেয়ে আসছেন অনেকে। তাদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন, অনেকের গায়ে একই রঙের টি-শার্ট, মাথায় একই রঙের ক্যাপ দেখা গেছে।

এর আগে দুপুর ১২টায় ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসে। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শোভাযাত্রায় দেশের বিশিষ্ট রাজনীতিক, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতিক ব্যক্তি, ক্রীড়াবিদ, এনজিও কর্মী, স্কাউটসদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি অংশ নেন।

শোভাযাত্রার প্রথম স্তরে রোলার স্কেটিং দল, দ্বিতীয় স্তরে হাতি ও ঘোড়ার গাড়ি, তৃতীয় স্তরে সিভিল ডিফেন্স ফায়ার সার্ভিস, চতুর্থ স্তরে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি চাকরিজীবী এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারিরা ছিলেন। শোভাযাত্রাটি মিরপুর রোডের রাসেল স্কয়ার ক্রসিং হয়ে কলাবাগান দিয়ে সায়েন্স ল্যাব থেকে বামে মোড় নিয়ে বাটা সিগন্যাল ও কাঁটাবন ক্রসিং পেরিয়ে শাহবাগ হয়ে ডানে মোড় নিয়ে ছবির হাট হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়।

সোনালীনিউজ/তালেব