ইসির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মানছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০১৮, ০২:২৩ পিএম

ঢাকা : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং দুই সিটির (উত্তর ও দক্ষিণ) নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অগ্রিম প্রচারণায় নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচারণা আইনত নিষিদ্ধ হলেও সম্ভাব্য কোনো কোনো প্রার্থী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন তফসিল ঘোষণারও আগে থেকেই। ইসির পক্ষ থেকে গত ৬ জানুয়ারির মধ্যে প্রচারণাসামগ্রী সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এর পরেও কোনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী তা অপসারণ করেননি।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, ঢাকা সিটি এলাকা থেকে আগাম নির্বাচনী প্রচারসামগ্রী সরানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। প্রার্থীরা নির্দেশনা না মানলে ব্যবস্থা নেবে কমিশন। এখন থেকে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা কাজ শুরু করবেন। নির্দেশনা অমান্যকারীদের ব্যাপারে কোনো শৈথিল্য দেখানো হবে না।

গতকাল বুধবার নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন এলাকা উত্তরা, কুড়িল বিশ্বরোড ও মগবাজার-মৌচাক ফাইওভারসহ বিভিন্ন এলাকা ছেয়ে গেছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে। এর মধ্যে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর, কাওরান বাজার এলাকা, মিরপুর, গাবতলী, তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামের পোস্টার দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ থেকে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আদম তমিজী হকের পোস্টারও কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় দেখা গেছে। এ ছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী শাকিল ওয়াহেদের পোস্টার তেজগাঁও এলাকা, সাতরাস্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন লিংক রোডের পাশে দেয়ালে দেখা গেছে।

সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারও দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকায়। শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দণিগাঁও ও নাসিরাবাদে দেখা গেছে প্রার্থীদের পোস্টার। এ ছাড়াও দেখা গেছে ডিএনসিসি ৫১ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী খন্দকার শরিফুল ইসলাম ও আবুল হোসেন মেম্বারের পোস্টার। ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রত্যাশী করিম খান, দেলোয়ার হোসেন ও দিলবর হোসেন মাদবরের পোস্টার দেয়ালে সাঁটানো অবস্থায় দেখা গেছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, নির্ধারিত সময়ের পরে কোনো প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানার কোথাও দেখা গেলে সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের জন্য নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রার্থিতাও বাতিল করতে পারে।

গত ৩১ ডিসেম্বর এক চিঠিতে ঢাকা উত্তর সিটির পুরো এলাকা এবং দক্ষিণের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, বিলবোর্ড, তোরণ, দেয়াল লিখনসহ সব ধরনের প্রচারসামগ্রী ৬ জানুয়ারির মধ্যে সরাতে বলা হয়েছিল। বছরের শেষ দিনে বিভাগীয় কমিশনারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি পাঠান যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ আহম্মদ খান।

চিঠিতে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার আগেই উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্পূর্ণ এলাকা এবং দক্ষিণের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে বিদ্যমান আগাম প্রচারসামগ্রী ৬ জানুয়ারি রাত ১২টার মধ্যে নিজ খরচে অপসারণ করতে হবে। তা না হলে প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বলেছি যার যার পোস্টার তারা নিজেরা অপসারণ করবেন। তফসিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগের বিষয় চলে আসে। তখন বিধিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। কেননা প্রতীক বরাদ্দের আগে কেউ নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোট হয়। আওয়ামী লীগের সমর্থনে ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩০ নভেম্বর তার মৃত্যুতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ১ ডিসেম্বর থেকে ওই পদটি শূন্য ঘোষণা করে। আইন অনুযায়ী ৯০ দিন অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ উপনির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির।

এ ছাড়া দুই সিটির আশপাশের ইউনিয়নযুক্ত করে ঢাকা উত্তর ও দণি সিটি করপোরেশনে ১৮টি করে ৩৬টি ওয়ার্ড গঠন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এরপর গত ৮ আগস্ট এসব ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোট করতে ইসিকে অনুরোধ জানানো হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই