মেলার পর্দা তুলবেন প্রাধানমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০১৮, ১০:৪৫ পিএম

ঢাকা: শৈত্যপ্রবাহের ঝাপটায় খানিক টানও পড়লো। কুয়াশাও উবে যায় যায় অবস্থা। দিন দশেক পর ঋতুরাজ বসন্তের আগমনও ঘটবে। শীতের এমন এক বিকেলে পর্দা উঠবে প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলার। কার্যত বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করলে সকাল থেকে বই প্রেমী ও লেখক প্রকাশকদের আগমন ঘটবে রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায়।

একুশে বইমেলা। প্রাণের মেলা। পাঠকের মেলা। লেখকের মেলা। প্রগতি আর সৃজনশীলতায় ভর করে এ মেলার আবেদন যেন দিনে দিনে বাড়ছেই। বসন্তের শুরু লগ্নের এমন আয়োজন ভাষার মাসকে যেন আরো অর্থবহ করে তুলছে। বাঙালির জাতিসত্তার আবেগ আর ভালোবাসার নিগূঢ় মিশ্রণে বছর ঘুরে সার্বজনীন রূপ পায় অমর একুশে বইমেলা।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় মাসব্যাপী একুশে বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলা একাডেমি এই মেলার আয়োজন করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী এদিন মেলার ওয়াই-ফাই সংযোগ ও ওয়েবসাইট এবং আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনেরও উদ্বোধন করবেন। বইমেলা চলাকালে ২২ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলা একাডেমির মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা যথারীতি আগামী ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে। চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

মেলার আয়োজন উপলক্ষে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অন্য বছর থেকে এবারের মেলার পরিসর বাড়ানো হয়েছে বলে আয়োজক পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমি সম্মুখস্থ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৫ লাখ বর্গফুট জায়গায়। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

এ বছর একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩৬টি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি ইউনিটসহ মোট ৪৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭১৯টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৫ হাজার ৫৩৬ বর্গফুট আয়তনের ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

গত বছর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট ৪০৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। আর প্যাভিলিয়ন ছিল ১৫টি।

এছাড়া ১৩৬টি লিটল ম্যাগাজিনকে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্হকেন্দ্রের স্টলে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।

একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির ১টি প্যাভিলিয়ন, ৪ ইউনিটের ২টি, একাডেমির শিশু কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকারের ১টি স্টল থাকবে।

মেলার আয়োজন নিয়ে কথা হয় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সঙ্গে। মেলার সার্বিক আয়োজন নিয়ে আশাবাদী তিনি। বলেন, বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় আয়োজন এটি। এমন একটি আয়োজনের জন্য আমাদের অপেক্ষার জন্য অন্ত থাকে না।

মেলা উদ্বোধনের অপেক্ষায় উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, ইতোমধ্যেই রূপ মিলেছে মেলার। আজকে রাতের মধ্যেই প্রায় পূর্ণতা পাবে। মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগিদ দেয়া হয়েছে।

সময় প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, সব ঠিক থাকলে গতবারের মতো এবারের মেলাও সফল হবে। রাজনৈতিক সংঘাতই মেলা আয়োজনের জন্য বড় বাধা। আমরা আশাবাদী, মেলার সাফল্যে সবাই সহযোগিতা করবে। প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে গেয়ে উঠবে মাতৃভাষার গান।

মেলা উপলক্ষে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া। তিনি মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গনে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেছেন, মেলায় সকল ধরণের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া, কেউ যদি মনে করেন তার বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন তিনি জানালে তাও দেয়া হবে।

এছাড়া, তিনি কোনো ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন বই মেলায় প্রকাশ করা এবং না আনার জন্যও আহ্বান জানান।

মেলাকে কেন্দ্র করে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানচলা চলেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যাতে করে ওই এলাকায় যানজট তৈরি না হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই