বাড়ি ভাঙার পরে এ কে আজাদকে দুদকে তলব

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০১৮, ০৯:০৭ পিএম

ঢাকা: প্রথমে ভাঙা হল হামিম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদের গুলশানের অভিজাত বাড়ি। ড্রয়িং রুম ও কয়েকটি রুমের ছাদসহ ভেঙে ফেলে রাজউক। এর একদিন পরেই তার নামে নোটিশ পাঠাল (দুর্নীতি দমন কমিশন) দুদক। চিঠিতে দুদক এ কে আজাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে।

বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এই সভাপতিকে আগামী ৩ এপ্রিল ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে হবে। কমিশনের উপ পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য গণমাধ্যমকে জানান, বুধবার (২১ মার্চ) তলবের নোটিস এ কে আজাদকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

একে আজাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়ে ঘোষিত আয়ের বাইরে হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগের কথা বলা হয়েছে দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে।

দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, এক ব্যক্তি গত অক্টোবরে এ কে আজাদের বিরুদ্ধে কমিশনের অভিযোগ করেন। সেখানে বলা হয়, আজাদ তার বিভিন্ন কোম্পানির কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। আমরা এখন সেটাই অনুসন্ধান করে দেখছি।

মূলত তৈরি পোশাকের ব্যবসা দিয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া ৫৯ বছর বয়সী আজাদ হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই গ্রুপের ব্যবসা ছড়িয়ে আছে বস্ত্র, প্যাকেজিং,পাট, চা, রসায়ন, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে। তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকেরও একজন পরিচালক।  

বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন চ্যানেল ২৪ এবং দৈনিক সমকাল আজাদের মালিকানাধীন টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের দুটি প্রতিষ্ঠান। তিনি সমকালের প্রকাশক এবং চ্যানেল ২৪ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এর আগে জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৮ সালে দেশের অনেক ব্যবসায়ীর মত এ কে আজাদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। রমনা থানার ওই মামলায় ঘোষিত আয়ের বাইরে তার ২০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার সম্পদ থাকার কথা বলা হয়েছিল।

তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেক মামলাতেই দুদক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। আজাদের মামলাও তার মধ্যে একটি।  

বর্তমানে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজাদ। গত দুটি জাতীয় নির্বাচনের আগে ফরিদপুর-৩ (সদর) ও ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আজাদের নাম সংবাদমাধ্যমে এলেও মনোনয়ন পাননি তিনি।

ফরিদপুর সদরের এমপি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বর্তমানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। আর ভাঙ্গা-সদরপুর আসনে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ পরাজিত হন মজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন চৌধুরী) কাছে। 

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০ মার্চ সকালে হঠাৎ এক অভিযানে এ কে আজাদের গুলশানের বাড়ি ভাঙা শুরু করে। গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের ১ নম্বর হোল্ডিংয়ে ১ বিঘা ৯ কাঠা ১৩ ছটাক জমির একাংশে তৈরি ওই দোতলা বাড়ির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ভেঙে দেয়া হয়।

রাজউকের পরিচালক অলিউর রহমান অভিযানের সময় সাংবাদিকদের বলেন, বাড়ির মালিক রাজউক অনুমোদিত কোনো নকশা দেখাতে পারেননি। ফলে এটি একটি অবৈধ ভবন। তাই তারা ভেঙে দিয়েছেন।

এ কে আজাদ পরে এক বিবৃতিতে বলেন, সকালে বাড়ির ‘সকল বৈধ কাগজপত্র’ দেখানোর পরও অভিযানে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট তা আমলে না নিয়ে বাড়ির একাংশ গুঁড়িয়ে দেয়। পরে তিনি রাজউকের চেয়ারম্যানকে অনুমোদিত নকশা, নামজারিসহ ‘যাবতীয় বৈধ কাগজপত্র’ দেখালে ভাঙার কার্যক্রম বন্ধ হয়।

সোনালীনিউজ/আতা