ঢাকায় আসেন ভুট্টো

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০১৮, ১১:২৫ এএম

ঢাকা : আজ ২১ মার্চ। ১৯৭১ সালের অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ২০তম দিন। মুক্তিপাগল হাজারো মানুষের দৃপ্ত পদচারণে রাজধানী ঢাকা এই দিন অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত মিছিল ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান তুলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে এগিয়ে চলে। সেখানে মুক্তি অর্জনের শপথ নিয়ে মিছিল যায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে।

জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দিন ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবনে স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে পঞ্চম দফা বৈঠকে মিলিত হন। তার সঙ্গে ছিলেন প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদ। এর আগে সকালে তিনি নিজ বাসভবনে আইনজীবী এ কে ব্রোহির সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন।

পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো এই দিন বিকালে ১২ উপদেষ্টা নিয়ে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। ভুট্টোর আগমন উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হয়। সাংবাদিকদের বিমানবন্দরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। ভুট্টোকে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ে আসার সময় রাস্তার দুপাশের পথচারীরা ভুট্টোবিরোধী স্লোগান দেন।

সন্ধ্যায় জুলফিকার আলী ভুট্টো কড়া সেনা পাহারায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। সেখানে তিনি দুই ঘণ্টারও বেশি সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এরপর হোটেলে ফিরেই উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এর আগে হোটেল লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ভুট্টো বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি এটুকু বলতে পারি যে, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’ ভুট্টো সাংবাদিকদের আর কোনো সময় না দিয়ে সরাসরি লিফটে ওঠেন। সাংবাদিকরা তার সহগামী হতে চাইলে ভুট্টোর ব্যক্তিগত প্রহরীরা অস্ত্র উঁচিয়ে বাধা দেয়।

এর আগে শেখ মুজিব এই দিন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কাছে বিশেষ দূত পাঠান। বিকালে চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় ন্যাপপ্রধান ভাসানী বলেন, ‘আলোচনায় ফল হবে না। এ দেশের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে চাপরাশি পর্যন্ত যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না, তখন শাসনক্ষমতা শেখ মুজিবের হাতে দেওয়া উচিত।’

১৯ মার্চ জয়দেবপুরে জারি করা কারফিউ এই দিন বেলা ১২টায় ছয় ঘণ্টার জন্য প্রত্যাহার করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তা ফের কারফিউ বলবৎ করা হয়। একই দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন আগামী ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করে। এ ছাড়া মগবাজারে মহিলা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক মহিলা সমাবেশে সেনাবাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে একটি প্যারা-মিলিটারি গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই