হাসিনা-মোদির স্পর্শে খুলবে বাংলাদেশ ভবন

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৫, ২০১৮, ১২:২৮ এএম

ঢাকা : বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধামন্ত্রীর হাত দিয়ে শুক্রবার (২৫ মে) বিশ্বভারতীতে উদ্বোধন হতে চলেছে বাংলাদেশের অর্থায়নে নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’। ইতোমধ্যে এর সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

ভবনের অন্যতম আকর্ষণ জাদুঘর এর শেষ মুহূর্তের কিছু ছবি টাঙানো হয় বৃহস্পতিবার (২৪ মে) বিকালে। এ কাজ তদারকি করেন বাংলাদেশের খোদ সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন ইতিহাসবিদ।

শুক্রবার (২৫ মে) দুই প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর তারা তাদের গন্তব্যে চলে গেলে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে বাংলাদেশ ভবন। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের পর সেখানে দুই প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উপস্থিত থাকবেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৪ মে) বিকালেই শান্তিনিকেতন গেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। সেই সম্পর্কের জন্যই একদিন আগে শান্তিনিকেতন এসেছেন। শান্তিনিকেতনের অনুষ্ঠানের বাইরে কলকাতায়ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। তাদের মধ্যে বৈঠকও হবে বলে জানান মমতা। তবে এক প্রশ্নে তিনি জানান, শান্তিনিকেতনের অনুষ্ঠানের কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা হবে না।  

এদিকে পুরো অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারতের ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী সংস্থা স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ বা এসপিজির সদস্যরা দফায় দফায় মহড়া দিচ্ছেন। সমাবর্তন এলাকা ও বাংলাদেশ ভবন কার্যত নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছেন তারা। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পুলিশও দুই প্রধানমন্ত্রীর সফরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা রক্ষীরা তাদের সহায়তা করছেন।  

৪ হাজার ১০০ বর্গমিটারের এই বাংলাদেশ ভবনে আছে দুটি সেমিনার হল, একটি লাইব্রেরি, একটি জাদুঘর, একটি স্টাডি সেন্টার ও একটি ক্যাফেটিয়ারিয়া। আছে ৪৫৩ আসনের একটি অত্যাধুনিক অডিটোরিয়ামও। জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও জাতীয় তিন নেতার ছবি স্থান পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ যে নৌকায় ভ্রমণ করে লেখালেখি করতেন সেই নৌকার একটি রেপ্লিকাও রাখা হয়েছে। জাদুঘরে সব মিলে ছবির সংখ্যা হাজার। আর লাইব্রেরিতে আছে সাড়ে তিন হাজার বই। এই লাইব্রেরিতে কমপক্ষে ১০ হাজার বই রাখার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী নূর। বাংলাদেশ ভবনের পুরো দায়িত্ব বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত জাদুঘর ও লাইব্রেরি নিজেদের তত্ত্বাবধানে রাখার কথাও জানান তিনি। গত তিন দিন সেখানে সব কাজের তদারকি করেন আসাদুজ্জামান নূর।

বৃহস্পতিবার (২৪ মে) প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে বাংলাদেশ ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন হবে- এটা আমাদের সবার কাছেই আনন্দ ও গর্বের। তাছাড়া এমন একটি প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের একটি ভবন তৈরি করা হচ্ছে যার সৃষ্টা দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচনাকারী। এই ভবনের মধ্যদিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরো মধুর হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  

জানা গেছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যেই বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরু হবে। সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বক্তব্য দেবেন ভিসি সবুজ কলি সেন। বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যেই ওই অনুষ্ঠান শেষ করে দুই প্রধানমন্ত্রী চলে যাবেন বিশ্বভারতীর পুরনো বাজিপোড়ানোর মাঠে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনে। ফিতা কেটে দুই প্রধানমন্ত্রী ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করার পর নিচের জাদুঘরে প্রবেশ করবেন। সেখান থেকে একটু এগিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠবেন দোতলার ডান দিকে লাইব্রেরিতে। জাদুঘর-লাইব্রেরি পরিদর্শন করে অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য রাখবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনও ঘুরে দেখবেন; যাবেন রবীন্দ্র ভবনে। সেখানে একান্তে কিছু সময় কাটাবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

জানা গেছে, শান্তিনিকেতন পরিদর্শনের সময় শেখ হাসিনাকে বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে রবীন্দ্র রচনাবলি উপহার দেওয়া হবে। কিন্তু উপহার সব সময় গোপন রাখায় বিশ্বাসী ভিসি সবুজ কলি সেন। তিনি বলেন, আমরা গুরুদেবের বই দেব- এটা তো ঠিকই। কিন্তু আরো যে উপহার দেব, সেটা বলা যাচ্ছে না।  

সোনালীনিউজ/এমটিআই