আসামে দেশহীন ১৯ লাখ মানুষ

দুই দেশের সম্পর্ক অম্লান থাকবে

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯, ০৪:১২ পিএম

ঢাকা : ১৯৫১ সালের পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো আসামের নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি হালনাগাদ করা হলো। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই তালিকা তৈরি করে ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকার।

কিন্তু নতুন এনআরসিতে মোট ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষকে আসামের তথা কার্যত ভারতের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হলেও ১৯ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব বাতিলের মাধ্যমে তাদের দেশহীন করা হয়েছে।

এ কারণে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে তারা- যাদের মধ্যে ১১ লাখেরও বেশি হিন্দু বাঙালি, ৬ লাখের বেশি মুসলমান এবং ২ লাখের বেশি অন্য জাতিগোষ্ঠীর। এদের মধ্যে রয়েছে বিহারি, নেপালি, লেপচা ইত্যাদি।

চার বছর ধরে প্রস্তুত করা নতুন এনআরসিতে বিপুলসংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোক বাদপড়ায় উদ্বিগ্ন বিজেপি নেতারা। তাদের উদ্বিগ্নতা দূর করতে কেন্দ্রীয় সরকার এখন নতুন আইনের কথা বিবেচনা করছে, যার মাধ্যমে তালিকায় স্থান পাওয়া বিদেশিদের বাদ দেওয়া সম্ভব হবে এবং বাদপড়া প্রকৃত নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।

কিন্তু ওই নতুন আইন নিয়েও দেখা দিতে পারে জটিলতা, এমন ধারণা অমূলক নয়। কেননা বাদপড়া হিন্দু বাঙালিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে অন্য ধর্মাবলম্বীদের বাদ দিলে তা আবার নতুন সংকটের সৃষ্টি করবে।

যদিও কেন্দ্র থেকে বলা হচ্ছে, এখনোই বাদপড়া লোকদের বিদেশি বলা যাবে না। কারণ তারা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন। এক্ষেত্রে আগামী ১২০ দিনের মধ্যে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হবে। এরপর হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টেও যাওয়ার সুযোগ থাকছে। কিন্তু সব প্রক্রিয়া শেষে বাদপড়া নাগরিকত্বহীন মানুষের ভবিষ্যৎ কী হবে তা অনিশ্চিতই রয়ে গেছে।

ভারতের বর্তমান সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৭১-এর ২৪ মার্চের পরে আসামে আবাসগড়া লোকদের ক্ষেত্রেই মূলত নাগরিকত্বের প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

তারা পরোক্ষভাবে বোঝাতে চাইছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সে সময় যারা ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এ সতর্কবার্তা। যদিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অথচ তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাদপড়া লোকগুলো ‘বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী’ বলে অভিহিত করেছেন।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত যদি এনআরসি থেকে বাদপড়া এসব লোকগুলোকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে চিড় ধরবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ এই লোকগুলো অনেক আগে থেকেই আসামে বসবাস করে আসছেন। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাদের নাগরিক হয়ে যাওয়ার কথা।

কিন্তু আমাদের সীমান্তবর্তী ভারতের রাজ্যগুলোতে বিজেপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল শুধু তাদের ভোট বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ নিয়ে রাজনীতি করে আসছে। আর সে উদ্দেশ্যেই এতদিন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি।

এখন যে বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো— এসব বাদপড়া ভাগ্যহত মানুষ মূলত হতদরিদ্র। এদের পক্ষে আইনি প্রক্রিয়া কতখানি ও কত দূর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কেননা ভারতীয় মুদ্রায় এর ব্যয় দাঁড়াবে ৫০ হাজার রুপি।

ইতোমধ্যে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফলে এসব দরিদ্র লোককে ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে ভেবেই এখন দিশাহারা। এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গোহাটিসহ সব স্পর্শকাতর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে।

বলা হচ্ছে, বাদপড়া আপাত দেশহীন মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারও নিয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। দেশের সীমান্ত এলাকা বিশেষত সিলেট সীমান্তে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি)।

অন্য সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যে উচ্চতায় রয়েছে, সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হোক তা নিশ্চয় উভয় দেশই চাইবে না। এমতাবস্থায় আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতের রাজ্যগুলোতে ‘বাংলাদেশ কার্ড’ যেন ব্যবহার করা না হয়, সেদিকে বাংলাদেশ সরকারকে সজাগ দৃষ্টি রাখার অনুরোধ করছি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই