প্রাথমিকে ব্যাকরণ বই নিয়ে নতুন কথা

  • মিঠুন দে | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০১৯, ১২:২৬ পিএম

প্রাথমিক শিক্ষা খাতের উন্নয়নে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বিনামূল্যে বই বিতরণ ও মিড-ডে মিল চালু করেছে। এ উদ্যোগগুলোর ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং ঝরে পড়ার হারও কমেছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদণ্ড তেমনি ভাষার গঠনরীতি এবং এর প্রয়োগ-প্রণালী জানাটা যথাযথভাবে শিক্ষা গ্রহণের মেরুদণ্ডস্বরূপ। শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ভাষার গঠন-প্রণালী, বানান পদ্ধতি, বাক্য তৈরির প্রক্রিয়াগুলো শিক্ষা গ্রহণের ভিত্তিমূলকস্বরূপ।

প্রাথমিকে যথাযথভাবে ভাষাজ্ঞান লাভ করলে তা ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো আলাদা বাংলা ব্যাকরণ বই অথবা ইংরেজি গ্রামার বই পড়ানো হয় না।

এর পরিবর্তে মূল বাংলা ও ইংরেজি বইয়ের প্রতিটি গল্প, প্রবন্ধ ও কবিতার শেষের দিকে প্রশ্ন প্রণয়নের জায়গায় খুবই সংক্ষিপ্ত পরিসরে ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামার সংযুক্ত করা হয়, যার কোনো ধারাবাহিকতা নেই। অথচ এ ক্ষেত্রে সরকার যদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে সীতানাথ বসাক প্রণীত আদর্শলিপি ও ধারাপাত বই দুটো পাঠ্য করে তাহলে প্রথম শ্রেণি থেকেই শিশুরা বানান সম্বন্ধে যথাযথ ধারণা পেতে পারে।

এছাড়াও তারা লাভ করতে পারে আদর্শলিপি বইয়ে থাকা নীতিবাক্যগুলো, যা ভবিষ্যতে প্রত্যেক কোমলমতি ছাত্রছাত্রীকে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে আদর্শবান নাগরিক হিসেবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ না করে হাইস্কুলে গিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে হঠাৎ করে তুলনামূলক কঠিন বাংলা ব্যাকরণ এবং ইংরেজি গ্রামার পড়তে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয়। এর রেশ ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চলতে থাকে। ফলে তারা এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা ২য় পত্র এবং ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্র উভয় বিষয়ে ব্যাপকহারে অকৃতকার্য হয়। কলেজ জীবনে গিয়ে ইংরেজি বিষয় ছাত্রছাত্রীদের সামনে বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে।

এর রেশ পুরো কর্মময় জীবনে চলতে থাকে। বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা হয়তো স্পিকিং ইংলিশে দক্ষ; কিন্তু গ্রামারিটিক্যাল বা লিখিত ইংরেজিতে খুবই দুর্বল। ফলে বর্তমানে ইংরেজিতে দক্ষ শিক্ষক ও কর্মী পাওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

আমার জানামতে, ঢাকা শহর, জেলা শহর এবং বিভাগীয় শহর পর্যায়ে অবস্থিত যেসব বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রাথমিক সহশিক্ষা চালু রয়েছে, ওইসব বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে আলাদাভাবে বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামার বই পড়ানো হয়।

সরকার নির্ধারিত সরকারি সিলেবাস অনুযায়ী যে বাংলা ও ইংরেজি বই দেয়া হয় তার বাইরেও সহায়ক পুস্তক হিসেবে ওইসব বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন লেখকের সহায়ক বই এবং বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামার বই পড়ানো হয়, যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পড়াতে পারে না। কারণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকার নির্ধারণ করে দেয়া বইয়ের বাইরে কোনো বই পড়াতে পারে না।

অনেক সচেতন অভিভাবক বুঝে উঠতে পারেন না কেন সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আদর্শলিপি, ধারাপাত, বাংলা ব্যাকরণ এবং ইংরেজি গ্রামার বই সরবরাহ করে না কিংবা পড়ানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করে না।

অথবা বিদ্যালয়গুলো নিজস্ব উদ্যোগে বইগুলো সংগ্রহ করার নির্দেশ প্রদান করে না। এ বইগুলো চটি বই আকারের হয়, যার ওজন খুবই কম। শিক্ষার্থীদের বহন করে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা বা কষ্ট হওয়ার কথা নয়। কাজেই অনেক সচেতন অভিভাবক, যাদের ছেলেমেয়েরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে, তারা মনে করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ব্যাকরণ এবং ইংরেজি গ্রামার বই স্বতন্ত্রভাবে পড়ালে শিক্ষার গুণগত মান অনেক উন্নত হবে।

মিঠুন দে: প্রাবন্ধিক

mithundey1.12.1966@gmail.com