বাংলাদেশ, তোমাকে ভালোবাসি অস্থিমজ্জা দিয়ে

  • আফসারুল আলম মামুন | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২১, ১০:৫১ এএম

ঢাকা : লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই দেশ। একদিন দুইদিন করে স্বাধীনতার ৫০ বছরে পদার্পণ। এই ৫০ বছর বাংলার জনগণ অনেক চড়াই-উতরাই পার করেছে। এখন আমরা যদি এই ৫০ বছরের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাতে যাই, তাহলে চোখের সামনে অনেক অপ্রাপ্তিই হয়তোবা ভেসে উঠবে। কিন্তু চোখটা একটু ভালো করে মেললে দেখা যাবে প্রাপ্তির খাতাটাও অনেক অনেক বড়। শুধু কয়েকটি অপ্রাপ্তির ফর্দ থাকার কারণে প্রাপ্তির খাতাটা আর খুলে দেখা হয় না। চলুন আজ প্রাপ্তির হিসাব মেলাই।

প্রথমে আসি আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত তথা চালের দিকে। একসময় আমরা চাল উৎপাদনে খুবই পিছিয়ে ছিলাম। চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেওয়া আমাদের জন্য সম্ভব ছিল না। কিন্তু আজ প্রেক্ষাপট ভিন্ন। শ্রীলঙ্কায় চাল রপ্তানি দিয়ে শুরু করে আজ বাংলাদেশ বিশ্বে চাল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত। এ দেশ চাল উৎপাদনে আজ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে নিজের আসন পাকাপোক্ত করে রেখেছে। চালের গড় উৎপাদনশীলতা বিশ্বে যেখানে প্রায় তিন টন, আমাদের দেশে সেখানে ৪ দশমিক ১৫ টন।

এছাড়া বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খাদ্য আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে সপ্তম। যার স্বাদ পুরো বিশ্বজুড়ে অনন্য, তা হলো আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ। এই জাতীয় মাছ ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে ১ নম্বর স্থানটি আজো বাংলাদেশের। আমিষের দিকে তাকালে দেখতে পাই এই দেশ সেখানেও বিশ্বে অন্যতম বড় আসনে অধিষ্ঠিত। গবাদিপশু উৎপাদনে বিশ্বে ১২তম অবস্থানে আমার এই দেশ। ছাগলের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মাংস উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ আর ছাগলের দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দুই নম্বর স্থানে। ভিটামিনের উৎস সবজি উৎপাদনে এদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়।
দেশে এখন ৬০ ধরনের ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদন হচ্ছে। এরপর আসা যাক বস্ত্রের দিকে। এখানেও বিশ্বে এদেশের জয়জয়কার। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আজ বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। এদেশের মজুর মেহনতি মানুষ বিশ্বের নামিদামি মানুষের কোটি কোটি টাকার পোশাক বানাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত প্রশংসার ফুলঝুরি অর্জন করছে। পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও পাট এবং পাটজাতপণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলার অবস্থান প্রথম। এছাড়া জনশক্তি রপ্তানি এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম। এখন একটু খেলাধুলার দিকে আসি।

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটে বিশ্বে সপ্তম স্থানে আমাদের এই দেশ। বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশকে নাকানি-চুবানি খাওয়ানো এখন আমার দেশের সোনার ছেলেদের কাছে সামান্যই মাত্র। কেননা বাংলাদেশ আজ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন। এখন আসি ফলের দিকে। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে দশম।

আম উৎপাদেন নবম এবং পেয়ারায় অষ্টম, আর জাতীয় ফল কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়। মাছে-ভাতে বাঙালির সেই প্রবাদ আজো বাংলাদেশের সাথেই যায় কেননা এখনো বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে চতুর্থ। এছাড়া অর্থনীতির অন্যতম সূচক জিডিপি প্রবৃদ্ধির এককে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে ষষ্ঠ। এই তো প্রথম সারির এককের কথা। এমনি নানা এককে আজ বাংলাদেশ বিশ্বে অনেক এগিয়ে। একটু চোখ ফেললে আমরা দেখি আজ বাংলাদেশ নিজেই তার জন্য বড় বড় জাহাজ বানাচ্ছে।

আজ বাংলাদেশে টানেল নির্মাণ হচ্ছে, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হচ্ছে, মেট্রোরেল হচ্ছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম কঠিন স্থাপনা পদ্মা সেতুর মালিক। আজ আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশ হিসেবেও বিশ্বে জায়গা করে নিয়েছি। আমাদের আছে বিশ্বের অন্যতম বড় নৌবন্দর- চট্টগ্রাম বন্দর। মহান আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। জ্ঞানের দিক থেকেও আমার দেশের দামাল ছেলেরা একচুলও পিছিয়ে নেই। তারা আন্তর্জাতিক নানা প্রতিযোগিতায় অনায়াসেই স্থান করে নিয়ে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনছে। আজ বাংলাদেশের মানুষ ঘরে বসেই অনলাইনে সব কাজ করে ফেলতে পারছে। যার ফলে আজ আউটসোর্সিং আয়ের দিকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম

এছাড়া আমরা ভাষার জন্য জীবন দেওয়া বিশ্বে অন্যতম এক জাতি। বিশ্বে এমন কয়টি জাতি আছে, যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে! এমন সুন্দর পারিবারিক সম্পর্কওয়ালা জাতি কয়টি আছে এই বিশ্বে! মা বাবা ভাই বোনের কী এক অপরূপ মেলবন্ধন। আজ বাংলাদেশকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ বিশ্ববাসীর কাছে নেই। হয়তোবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা এখনো পিছিয়ে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমাদের কিছু সূচক এখনো নিচের দিকে। এর জন্য দায়ী কে? এর জন্য আমরা সবাই দায়ী। যার জন্য আমাদের সবাইকে এক হতে হবে। শুধু প্রশাসনের নয়, আমাদেরকেও স্ব-স্ব অবস্থান থেকে এই সূচকগুলোর ঊর্ধ্ব অবস্থান অর্জনে কাজ করতে হবে।

আমাদের ভাবতে হবে শুধু আমার নামে জারি করা সম্পত্তিটুকু আমার নয়, পুরো বাংলাদেশের সব সম্পত্তি আমার। আমার চারপাশের পরিচিত জনই শুধু আমার আত্মীয় নয়। পুরো বাংলাদেশের সবাই আমার। তাহলেই আমরা এক একজন সৎ ব্যক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারব। দুর্নীতির লাগাম তুলে ধরে দেশটিকে উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারব ইনশাআল্লাহ। এর জন্য শুধু প্রয়োজন দেশটিকে ভালোবাসা। কয়েকটি অপ্রাপ্তিকে বড় করে না দেখে প্রাপ্তির খাতাকে বড় করে দেখা। অপ্রাপ্তিগুলোর জন্য নিজের দোষগুলো খুঁজে বের করে প্রশাসনকে সাহায্য করা। প্রয়োজনে জীবন বাজি রেখে দেশের অভ্যন্তরীণ শত্রুদের মোকাবিলা করা।

এটি ভাবা যে, আমিও এদেশের একজন নাগরিক। এই দেশটিকে কিছু একটা দেওয়া আমার নৈতিক দায়িত্ব। তাই আমরা সবাই নতুন বছরের নতুন দিনে নিজেকে নতুন করে তৈরি করি। পুরো দেশকে নিজের মনে করি, নতুন করে সাজাই। সবাই এক সুর আর স্বরে আওয়াজ তুলি— ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।

লেখক : শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়