অবহেলা আমিত্ব এবং আমরা

  • মো. এনামুল হাসান কাওছার | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০১৭, ০৯:৫০ পিএম

পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তেই ভালোবাসা আর অবহেলার চলছে এক অসাধারণ লীলাখেলা। আমরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব শানিতেছি সময়ের সূচিপত্রে। প্রতিক্ষণ প্রতিক্ষেত্রে আঁকছি আকাঙ্ক্ষিত আমিত্ববোধের অধ্যায়ের। আমরা ব্যস্ততায় ডুবন্ত প্রাণী, ব্যস্ততা বহুবিধ- নিজেকে প্রমাণের, অন্যকে নিয়ে বিদ্রূপের, সমালোচনার, আড্ডাবাজির, লক্ষ্যস্থলে পৌঁছানোর- সর্বোপরি ভালো থাকার। কেউ উপকারে ভালো থাকে, কেউবা অপকারে ভালো থাকে; কতই না বিচিত্র আমরা!

জীবনবৃত্তের গণ্ডিতে কেউ না কেউ আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। কেউ বা বন্ধুবেশী শত্রু। কিন্তু আমাদের প্রতি যাদের অতি শুভাকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ যারা আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষিণী তাদের প্রতি আমাদের কেন অতি খামখেয়ালিপনা?

আমাদের জন্য যারা সুখ বিসর্জন দিয়ে দুঃখী আর দুঃখিতা হয়ে সারাজীবন কাটায় তাদের জীবনের পড়ন্ত বেলা কেন কাটে বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগৃহে?

আমাদের কেউ সহমর্মিতা আর শ্রদ্ধা দেখালে আমরা উপকারের হাত বাড়াতে চাই না। তারচে সহমর্মিতা আর শ্রদ্ধার বিপরীতে এক অবিসংবাদিত ভাব আর ইগো দেখাই। কারো সাময়িক ক্ষমতার চর্চা দেখলে আমাদের অক্ষমতারোগ হয়; আমরা হই জিম্মি। মুখে ভাত না দিয়ে গুঁজে রাখি অতিরঞ্জিত রসালো পিঠা। জ্বি স্যার, জ্বি ভাই অর্থাৎ জ্বি... সম্মোধনে বাতাস জ্বি যুক্ত হয়, গন্ধহীন অক্সিজেনেও তখন জ্বি জ্বি... গন্ধ পাওয়া যায়!

বন্ধু ভেবে বিশ্বস্ত সূত্র জেনে কেউ দুর্বল দিক আমাদের অবগত করলে আমরা ওর খারাপ সময়ে স্বীয় স্বার্থ সাধনে বিশ্বস্ততার যথাযথ মূল্যস্বরূপ দুর্বল দিককে গুলি হিসেবে বন্দুকে পুরে বন্ধুর দিকে প্রথমে তাক করি। প্রয়োজন আর স্বার্থসিদ্ধির সংকল্পে আমরা একজনকে পরিহার করে আরেকজনের পিছু ছুটি।

কাউকে আপনার স্বপ্ন, দুর্বলতা, প্যাশন ও আবেগের কথা বললে সে হাসে। কিন্তু বিশ্বাস করুন সে নিজেও স্বপ্ন, দুর্বলতা, প্যাশন ও আবেগ নিয়ে বাঁচে। আমাদের অবহেলা রোগ আমিত্ববোধ জাগরিত করে অবচেতনভাবে। আমিত্ববোধে আর আমিত্বভাবে আমরা অসার হই কখনো বিকশিত হতে পারি না।

কারো এককেন্দ্রিক দক্ষতা আর মূল্যায়নে অবহেলা না করাই শ্রেয়। আপনার প্রতি সে আবেগময় আর শ্রদ্ধাবান তাই সে অবহেলিত হবে- এই বিচার অন্যায়। আপনার অবহেলা কাউকে থমকে দিতে পারে খানিককাল। কিন্তু থামাতে পারবে না চিরকাল।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়