যতো দায় ইউএনও’র!

  • জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০১৭, ১০:০৯ পিএম

আকাশের মন ভালো নেই। রোদেলা চেহারায় বৃষ্টির আভাস! দমকা হাওয়াও বইতে পারে যেকোনো সময়। এদিকে তিতাস- মেঘনা নদীর অথৈ জলের উপর দিয়ে প্রচণ্ড বেগে ছুটে চলেছে স্পিডবোট! ক্যামেরায় ধারণ করাও দুষ্কর! এ যেন রকেটের গতিকেও হার মানায়।

বর্ষাকাল। তাই জলে ভরপুর নদী তীরবর্তী বিলগুলো। নদী-বিল মিলেমিশে একাকার হয়ে ছোটখাটো সাগরে পরিণত। দুপাশের বিস্তীর্ণ জলরাশির ওপ্রান্তে দূরের জনপদগুলো দেখায় কুয়াশার মতো।

দখিনা বাতাসে ছলাৎ ছলাৎ জল আছড়ে পড়ছে স্পিডবোটের গায়ে। একটু এদিক ওদিক হলেই ঘটে যেতে পারে ভয়ানক দুর্ঘটনা! সলিলসমাধি হতে মাত্র কয়েক সেকেন্ডই যথেষ্ট!

ভয়, অনিশ্চয়তা সবকিছু পাশ কাটিয়েই এক ডজন তাজা প্রাণ নিয়ে বোটটি যেন বাতাসে ভেসেই সদর্পে ছুটে চলেছে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে!

গেল পহেলা জুলাই দুপুরবেলা স্পিডবোটগুলোর ‘নবীনগর-গোকর্ণ ঘাটে’ এমন ঝুঁকিপূর্ণ আসা যাওয়া চোখে পড়লো লঞ্চে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফেরার পথে। নবীনগর থেকে নরসিংদী এবং ভৈরব রুটেও একই চিত্র দেখলাম নবীনগর ঘাটে এসে। 

পথে জানমালের এতো ঝুঁকি! অথচ নিরাপত্তায় নেই কোনো লাইফ জ্যাকেট! না যাত্রীর গায়ে, না বোটে। এমনকি দুই ঘাটে অপেক্ষমাণ অর্ধশতাধিক বোটের একটিতেও দেখা মিললো না লাইফ জ্যাকেট। স্পিডবোটে স্থানীয় এক সাংবাদিককেও দেখা গেলো বিনা প্রতিবাদে জ্যাকেট ছাড়াই চড়ে বসলেন!

মজার বিষয় হলো, মাত্র কদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘোষণা দিয়ে স্পিডবোট ঘাটে অভিযান চালিয়েছিলেন নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালেহীন তানভীর গাজী। করেছেন জরিমানা এবং এরইমধ্যে অনেক পদক্ষেপও নিয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনসচেতনতা ও সতর্কতামূলক বার্তাও জারি করেছেন ইউএনও মহোদয়। এতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনও আসে। এতো কিছুর পরও সপ্তাহ পার হতে না হতেই পুনরায় অনিরাপদ যাত্রা শুরু হয়ে গেছে! বিষয়টি এমন মনে হচ্ছে যে,

‘চালক চালায়, যাত্রী যায়,
ইউএনও'র কেন এতো দায়!?’

তিতাস- মেঘনার বুকে স্পিডবোট

প্রশ্ন জাগে, ইউএনওর অভিযানের পর যে লাইফ জ্যাকেটগুলো দেখা গেছে স্পিডবোটগুলোতে সেগুলো গেলো কোথায়? তাহলে কি পরিস্থিতি সামাল দিতে জ্যাকেটগুলো ভাড়ায় এনেছিলো?

কবি বলেছেন, আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে, তোমার ছেলে উঠলে মাগো রাত পোহাবে তবে। মনে হচ্ছে কবির কবিতাও আজকাল মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে।

লেখক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, পরিচালক, ঐতিহ্য কুমিল্লা।