এ শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব!

  • মাহের ইসলাম | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৪, ২০১৮, ০৮:৫৩ পিএম

ঢাকা: দিনে দুপুরে একটা জেলা শহরে দুই দল সন্ত্রাসীর মধ্যে যদি শতাধিক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয় – তাহলে ঘটনাকে কিভাবে দেখা হবে?  বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে, আমাদের মানবিক বা সামাজিক গুণাবলী এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, আমরা এটাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে উপেক্ষা করতে পারি ।

এরকম একটা ঘটনা যদি ঘটার পরে, কোন জাতীয় দৈনিক সেটা প্রকাশে ব্যর্থ হয়- তাহলে ওই পত্রিকার পেশাদারিত্বের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তার দায় আমার মত সাধারণ পাঠকের কতটুকু বর্তাবে তা অবশ্য আমার জানা নেই। আমার এই অজ্ঞানতা স্বীকার করতে আমার দ্বিধা নেই।

প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি কোন কারণে এমন একটি সংবাদ চেপে গিয়ে থাকেন বা প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণে বিরত থাকে– তাহলে মানবিক গুণাবলীর মানদণ্ডে তার নৈতিকতা আর পেশাদারিত্বের নিক্তিতে তার সততা ও আন্তরিকতার পাল্লা হালকা বলে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ কতটুকু আছে।

এক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার যথার্থতা কিংবা পেশাদারিত্বের মানের ঘাটতি নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করা কিংবা আলোচনা/সমালোচনা করা হলে তাও আবার খোলা মনে মেনে নেয়ার মানসিকতা কোন পর্যায়ে কতটুকু আছে – সে বিষয়ে বিস্তর সন্দেহের অবকাশ আছে।

উপরের কথাগুলো, দুই দল সন্ত্রাসীর মধ্যে খাগড়াছড়ি শহরে সংঘটিত গুলি বিনিময়ের ঘটনাকে উপলক্ষ করে লেখা। স্থানীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে যা জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে অন্তত ৩০/৩৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্যে প্রায় শতাধিক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। ভয়ে বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েও যায় অনেকে। সাথে সাথেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পুরো এলাকায় তল্লাসী শুরু করে।

যদিও সংবাদে উল্লেখ করা ছিল, এই ঘটনায় কারা জড়িত থাকতে পারে– কিন্তু ইচ্ছে করেই তা উল্লেখ করা হলো না। (তবে অনুসন্ধানী পাঠক চাইলে (https://bit.ly/2KJ1lHl) লিংক থেকে বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন।) কারণ, ওই সন্ত্রাসিরা এ লেখার প্রতিপাদ্য বিষয় নয়। এ পাঠকদের দৃস্টি আকর্ষণের চেষ্টা অন্যদিকে।

যেকোনো মানুষের দৃষ্টিতে যারা এটা ঘটিয়েছে, তারা সন্ত্রাসী – সে যে দলেরই হোক না কেন। তাদের পরিচয় সাধারণ মানুষের জানা দরকার। কিন্তু, তার চেয়েও বেশি দরকার এটা জানা যে, বাংলাদেশের অনেক বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র এই ঘটনাটি বেমালুম চেপে গেছে। যারা দিনে দুপুরে জেলা শহরের একটা বাজারে শতাধিক রাউন্ড গোলাগুলি করল, তারা অবশ্যই অপরাধী।

তাদেরকে কি বলা যায়, যারা জানা সত্ত্বেও এবং দায়িত্বের মধ্যে পড়া সত্ত্বেও এটা অন্যদের কাছ থেকে গোপন করল- তারা কি তাদের পেশাদারী দায়িত্ব বা নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন?

আমাদের দেশের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা সম্ভবত জনগণকে তেমন একটা নাড়া দেয় না আজকাল। ব্যাপারটা অনেকটাই ট্র্যাফিক জ্যাম বা বর্ষাকালের রাস্তায় জলাবদ্ধতার কাছাকাছি পৌঁছানোর পর্যায়ে হয়ত চলে যেতে পারে একটা সময়।

আর এখন যদি দেখি যে, দুই দল সন্ত্রাসীর গোলাগুলির ঘটনা, তাও আবার আড়ালে বা লুকিয়ে নয়, রীতিমত জেলা শহরে এবং প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটছে। অথচ সংবাদপত্রে স্থান পাচ্ছে না।

ধরুন এই ঘটনাটি সমতলের কোনো জেলায় ঘটেছে- তাহলে কী হতো? সাথে সাথে টিভি চ্যানেল, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও জাতীয় পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ব্রেকিং চলে আসতো। টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত লাইভ বা পরবর্তী নিউজ বুলেটিনেই খাগড়াছড়ি থেকে স্থানীয় প্রতিনিধিদের লাইভ বক্তব্য ও ফুটেজ প্রচার করা হতো। রাতের টকশোগুলোতে দেশের বিদগ্ধ আলোচকরা কথা বলতেন এ নিয়ে। তাদের সাথে লাইভ যুক্ত করা হতো স্থানীয় প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। কিন্তু খাগড়াছড়ির এ ঘটনায় কিছুই ঘটেনি। শুধু খাগড়াছড়ি বলে নয়, পাহাড়ে এরকম বা এর চেয়েও আলোচিত শত শত ঘটনার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত একই প্রতিক্রিয়া দেখানো হয় গণমাধ্যমে।

কাজেই এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠতে পারে যে, যে গণমাধ্যম সমতলে এতো ভাইব্রান্ট, সে গণমাধ্যম পাহাড়ের ক্ষেত্রে এতোটা উদাসীন কেন? কিম্বা যেসব গণমাধ্যমের প্রতিনিধি সমতলে ব্যাপক সক্রিয় তাদেরই পাহাড়ের প্রতিনিধিরা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এতোটা নিস্ক্রিয় থাকে কী করে?

তখন অবশ্যম্ভাবীভাবে একটা কথাই শুধু বলা যেতে পারে – এ শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব !

লেখক: কলামিস্ট

সোনালীনিউজ/জেএ