ভাল করে খুঁজে দেখেন

  • ফাহাদ মোহাম্মদ | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০১৮, ০২:৩৭ পিএম
পুলিশ সার্জেন্ট ফাহাদ মোহাম্মদ

আমার কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা। A+, B+, O+ রক্তের জন্য সেচ্ছাসেবী দের কল না দিয়ে নিজেদের মধ্যে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন। ১০ জনকে কল দিলে কম করে হলেও ৩জন পাবেন। অতিজরুরী হলেও নিজেদের মধ্যেই খুঁজেন। কারণ আপনার জরুরী নিজেদের মানুষই ভাল বুঝবে।

প্রথম কয়েক বছর কেউ রক্তের জন্য কল করলে পাগল হয়ে ডোনার খুঁজতাম। না পেয়ে যখন রোগীর লোককে কল দিতাম তখন তারা বিনয়ের সুরে বলতেন, ভাই ধন্যবাদ। আমরা রক্ত পেয়ে গেছি। তখন নিজেরে বড়ই আহাম্মক মনে হত। রক্ত পাওয়ার আগে ১০টা কল দেওয়া যায় আর রক্ত পাওয়ার পরে একটাও না?

অনেককেই বলতে শুনি বাচ্চা সিজারে হবে বলে আগেই সিদ্ধান্ত নেন। সিজার হলে যে রক্তের প্রয়োজন পরে তার কথা বেশিরভাগ লোকের মনে থাকে না। তাদের মনে থাকে নাম কি হবে? ছেলে না মেয়ে হবে? কোন হসপিটালে সিজার ভালো হবে। কিন্তু মা ও শিশুর জীবন বাচানোর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটাই উনারা সংগ্রহ করে রাখেন না।

ডেলিভারি ডেইটের অন্ততপক্ষে ২ মাস আগে থেকেই ডোনার ঠিক করে রাখলে টেনশন মুক্ত থাকা যায়। আর সেই কাজটা।আপনাকেই করতে হবে। আরেকজনের উপর দায়িত্ব দিলে কাজটা সঠিক হবে না। বাচ্চার জন্ম দেওয়ার কাজটা যখন আপনি করেছেন তখন এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে কেন অন্যের উপর নির্ভরশীল হবেন?

জাতি হিসেবে আমরা হয়ত খুব বেশি অকৃতজ্ঞ আবার কেউ কেউ খুব বেশি কৃতজ্ঞ। একজন লোক তার নিজের কাজককর্ম ফেলে আসে আপনার আত্মীয় বা পরিবারের কাউকে রক্ত দিয়ে বাঁচাতে। রক্ত দেওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত আপনি তাকে ১০টা কল দিলেন কিন্তু রক্ত দেওয়ার পরমুহূর্ত থেকে সে আবার অকাজের হয়ে যায়। আপনার কোনো অনুষ্ঠানের দাওয়াত সে পায় না। সারা বছরে একবার কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেন না সে কেমন আছে। যারা আপনার বিপদের সময় রক্ত না দিতে অজুহাত দেখিয়েছিল তারাই আপনার আপনজন রয়ে গেলো।

আমি এমনও দেখেছি নিজের মা, বাবা, বোন, স্ত্রী কে রক্ত দিতেও কেউ কেউ অস্বীকার করে। নিজের পরিবারের জন্য যদি আপনার দরদ না থাকে তাহলে আরেকজনের থাকবে কেন? রক্তের প্রয়োজন হলে আগে নিজেদের মধ্যে খুঁজ করেন। যারা দাওয়াত করলে সবার আগে আসে তাদের মধ্যে খুঁজ নেন। খাওয়ার দাওয়াতে যদি ১০০ জন লোক আসে তাহলে আপনার পরিবারের কারও জীবন বাঁচাতে কেনো তাদের মধ্য থেকে একজন লোক আসবে না?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রক্তের জন্য খুঁজাখুঁজি না করেই রোগীর আত্মীয়পরিজন সেচ্ছাসেবীদের কল করেন। রক্ত সংগ্রহের সম্পূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে দেন একজন মানবতা পাগল কাউকে। কারণ তিনি জানেন সে যে করেই হোক রক্ত সংগ্রহ করে দিবে।

এখন যদি কেউ আমাকে রক্তের জন্য কল দেয় তাহলে জিজ্ঞাস করি নিজের কেউ নাই? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর আসে না। যখন বলি খুঁজ নিয়েছেন? উত্তর আসে না ২/৩ জনের চেক করেছি। আপনার পরিবার আত্মীয়স্বজন মিলে কি মাত্র দুইজন মানুষ? ভাল করে খুঁজ নিয়ে দেখেন। যখন আর কল আসেনা তখন বুঝতে বাকি থাকে যে রক্ত ম্যানেজ হয়ে গেছে। কনফার্ম হওয়ার জন্য কল দিলে বলেন, ভাই রক্ত পাওয়া গেছে।

লেখক-ফাহাদ মোহাম্মদ, ট্রাফিক সার্জেন্ট, বাংলাদেশ পুলিশ।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন