মুখে কই মাছ ঢুকে মৃত্যু, সহকর্মী প্রচুর হাসছিলেন!

  • সনজয় দে | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০১৮, ১১:২৭ এএম

সাংবাদিকতা পেশায় ১৫টি বছর পার হয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিকতা আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এখানে যুক্ত হওয়ার ফলেই নিজের দেখা ও বোঝার সনাতনি পদ্ধতিটি বদলে গেছে। বাইরের প্রকাশ্য রূপের ভেতরে যে আরো অনেক গল্প থাকে তা সম্ভবত সবচেয়ে ভালো বোঝা সম্ভব এ পেশায় থেকেই। আর অনেক জটিলতার পরেও যে কোনো তথ্যের উৎসে সরাসরি প্রবেশের সুযোগও সাংবাদিকের বেশি। ফলে গল্পের ডালপালায় ঘোরাঘুরির চেয়ে ঘটনার প্রকৃতি যাচাইয়ের সক্ষমতা রয়েছে সাংবাদিকের।

এই পেশার সবচেয়ে খারাপ দিকটি হলো- এটা একদিকে সংবাদ কর্মীকে নিরাবেগ করে তোলে, আবার একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপের মুখেও ফেলে। প্রতিদিন কত বিভৎসতা-অপরাধ-খুন-জখমের মধ্যে দিয়ে সংবাদ কর্মীর যেতে হয়, যা শেষপর্যন্ত বিবেচিত হয় একেকটি 'খবর' হিসেবে। এসবকে পরিবেশন উপযোগী করার পর পৌঁছায় পাঠক-দর্শকের কাছে। এই পরিবেশনের সময় নৃশংসতা-বিভৎসতার অনেককিছুই ছেঁটে ফেলা হয়। যে শিশুটি খুন বা ধর্ষণের শিকার হলো- তার পুরো বিবরণ, বিভৎসতার ছবি- সবই একজন সংবাদ কর্মীকে জানতে ও দেখতে হয়- যার ছায়ামাত্র পৌঁছায় পাঠক বা দর্শকের কাছে। একজন সংবাদ কর্মীর নিরাবেগ প্রতিষ্ঠার যুদ্ধটা তাই পেশাগত জীবনের পুরোটা সময়জুড়ে, ফলে মানসিক চাপের প্রভাবও দীর্ঘমেয়াদি।

১৫ বছরে অনেক ভয়ঙ্কর মৃত্যুর অনুপুঙ্খ বিবরণ আমি জেনেছি। যদি এর মধ্যে অন্যতম বাছাই করতে বলা হয়- আমি বেছে নেব গত বছরের ১৬ অক্টোবর হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের বিলে মাছ ধরার সময়ে মুখে কই মাছ ঢুকে ইউনুছ মিয়া নামে এক তরুণের মৃত্যুকে। ইউনুছ একটি কই মাছ ধরে মুখে কামড় দিয়ে আটকে রেখে আবার মাছ ধরছিল। এক পর্যায়ে মাছটি গলার ভেতরে ঢুকে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় সে।

আমার মনে আছে, প্রতিবেদনটি সম্পাদনার সময়ে পাশের সহকর্মী প্রচুর হাসছিলেন। আমরা এভাবেই ভয়ঙ্কর ঘটনা তুলে ধরতে গিয়েও অনেক সময়ে হাসি, হয়ত হেসে হেসেই চাপমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি...

লেখক- সনজয় দে, বার্তা সম্পাদক, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন