ভোটের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে জনগণ

জনগণের অধিকার নিশ্চিত করুন

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০১৯, ১০:৫৬ এএম

ঢাকা : আমার ভোট আমি দিব- যাকে খুশি তাকে দিব। ভোট দিয়ে নিজের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো সেই স্লোগানমুখর দিন বুঝি শেষ হতে যাচ্ছে। কারণ ভোটের নামে এখন যা হচ্ছে, তাতে আর আগামী দিনে ভোটগ্রহণ পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ছিল অনেক। জনমনে আশা ছিল ২০১৮-এর জাতীয় নির্বাচনে নির্বিঘ্নে নিজের ভোট দিয়ে ভোটাধিকারের গর্বে উজ্জীবিত হবে নবীন-প্রবীণ ভোটারেরা। কিন্তু এবারো হাটে হাঁড়ি ভাঙল। জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ভোট দিতে যায়নি। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট আগেই কেউ দিয়ে দেওয়ার কারণে ফিরে এসেছেন। অপরদিকে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ভরা হয়েছে সিলমারা ব্যালট পেপার। একই ধারাবাহিকতা লক্ষ করা গেছে প্রায় তিন দশক পর অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে। সেখানেও ভোট নিয়ে কারচুপি, অনিয়ম, সিলমারা ব্যালট বাক্সভর্তির কত অভিযোগ। তারপর শুরু হলো ধাপে ধাপে উপজেলা নির্বাচন। সেখানেও একই চিত্র।

বলতে গেলে দেশের সার্বিক ভোট পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে যে চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো, দেশে নির্বাচনের নামে তামাশা চলছে। এ বিষয়ে আপামর জনগণের প্রতিক্রিয়া হলো, নির্বাচনের নামে এই তামাশা করে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ আর হাজার কোটি টাকা অযথা অপচয় করার কোনোই মানে হয় না। বলা যায়, ভোটের প্রতি এখন আর মানুষের কোনো আগ্রহ নেই।

ভোট দেওয়া না দেওয়া, নির্বাচন হওয়া না হওয়া অথবা ভোটে প্রার্থীদের হারা বা জিতে যাওয়া নিয়ে দেশের মানুষের এখন বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। কথা হচ্ছে এত অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, কারচুপির পরও যারা এ ধরনের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অথবা জনগণের ভুয়া ব্যালটে যারা জিতে আসেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা কী করে তৃপ্তবোধ করেন, সেটাই হাস্যকর। বিস্ময়করও বটে!

আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে ৬৫ পার্সেন্ট ভোট তরুণদের। প্রত্যাশা ছিল তরুণরাই ঠিক করবে দেশ চালাবেন কারা। তরুণরা প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্ব চায়। কিন্তু তাদের সেই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি জাতীয় নির্বাচনে। তারুণ্যের নেতৃত্ব সৃষ্টির প্ল্যাটফরম ডাকসুর নির্বাচনেও সে প্রত্যাশার গুড়েবালি হয়েছে। প্রত্যাশা পূরণ হলো না উপজেলা নির্বাচনেও। তাই সঙ্গত কারণেই তরুণ ভোটাররা নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, নির্বাচন পদ্ধতি এবং ভোটাধিকার নিয়ে চরমভাবে হতাশ হয়েছে।

সরকারের উচিত ছিল জাতীয় নির্বাচনের বাস্তবতা থেকে ডাকসু নির্বাচনকে অবিতর্কিত রাখার উদ্যোগ নেওয়া। তারপরের উপজেলা নির্বাচনেও স্বচ্ছতার বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়নি। তা হলে অযথা কেন এই নির্বাচনগুলো দেওয়া হচ্ছে? সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয় যদি বলা হয়, তা হলে এও বলতে হবে যে, ভোট দেওয়ার অধিকারও কিন্তু নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। তবে কোন আইনে, কোন যুক্তিকে ভোটারবিহীন এমন ভোটের আয়োজন করা হচ্ছে- সে বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

মনে রাখতে হবে, জনগণের ভোটাধিকার বন্ধ হলে রাজনীতিও হয়ে পড়বে স্থবির। জৌলুস হারাবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। দেশের রাজনীতিতে নেমে আসবে চরম অস্থিরতা। তরুণ ভোটারদের অগ্রাহ্য করা যে কোনো সরকারের পথচলায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা দেশের ভোটারদের সিংহ ভাগই তরুণ ভোটার। তারা তাদের মতো করে হিসাব-নিকাশ করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রক্ষমতার পটপরিবর্তনের মূল নায়ক তারাই। তরুণরা এসব বিষয়ে সোচ্চার এবং সচেতন।

আমাদের তরুণ সমাজ রাজনৈতিক হানাহানি, লাশের রাজনীতি, দুর্নীতি, অনিয়ম, লুণ্ঠন, বাচালতা, মিথ্যাচার, হরতালবিরোধী অবস্থানে। একইভাবে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হতে চায়। সুশাসনের পক্ষে থাকবে তারা। তাই আগামী দিন থেকে নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে তারাই ঠিক করে নেবে দেশ চালাবে কারা অথবা দেশ চলবে কীভাবে!

সোনালীনিউজ/এমটিআই