‘বিএনপিকে শেষ করতে গুলশান কার্যালয় সরাতে চায় সরকার’

  • নিজস্ব প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০১৬, ১০:৫২ পিএম

বিএনপিকে নিঃশেষ করতেই সরকার গুলশান থেকে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় সরাতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

বুধবার (২০ জুলাই) বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং যুগ্ম-মহাসচিব ও যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ছেলে আরাফাত আব্দুল্লাহ অন্তরের সুস্থতা কামনায় এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

গয়েশ্বর বলেন, ‘সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশ ও জাতি আজ নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্কে ভুগছে। এটি নিয়ে সারা জাতি চিন্তিত। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এ সমস্যা সমাধানের পথও খুঁজছে। আমাদের নেত্রী (খালেদা জিয়া) কাউকে দোষারোপ না করে, কারোর দিকে কোনো আঙ্গুল না তুলে নিঃশর্তভাবে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান করেছেন। কারণ, জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়েই এ সঙ্কট মোকাবেলা করার সব চেয়ে মোক্ষম পথ। কিন্তু সরকার তাতে (খালেদার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান) সাড়া না দিয়ে এটা নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক কথা বলছে।’

তিনি বলেন, ‘এক সাংবাদিক বন্ধুর কাছে শুনলাম, গুলশান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় সরিয়ে দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।’

এরপর বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাসীনরা আজ বিএনপির মতো অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিঃশেষ করতে চায়। কূটনীতিকদের নিরাপত্তার ওজুহাত দেখিয়ে তারা গুলশান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার অফিস সরাতে পারে। কারণ, গুলশান কূটনৈতিক এলাকা।’

‘কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়টা যেমন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তাও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ বললেন গয়েশ্বর।

তিনি দাবি করে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ করা এবং আওয়ামী লীগ ব্যতীত ভিন্নমতের লোক এ দেশে থাকতে পারবে না, এটাই তাদের মূল লক্ষ্য। সেজন্য বেগম খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে ক্ষমতাসীনরা সাড়া দিচ্ছে না। বিএনপির ওপর নানা নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে।’

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘গণতন্ত্রের পথ সংকুচিত করবেন না। এখনো সময় আছে, গণতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত করুন। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার সুযোগ করে দিন। এটা বন্ধ করলে তা কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।’

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবদলের সিনিয়র সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদের সভাপতিত্বে এতে আরো অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, যুবদলের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুগ্ম-সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, উত্তরের সহ-সভাপতি কফিল উদ্দিন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য গিয়াস উদ্দিন মামুন; ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।

এদিকে, গুলশান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় সরিয়ে দেয়া হবে-মর্মে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চিঠি এসেছে কিনা, জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এবং তার প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবির খান বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান।

গুলশানের রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক এলাকা থেকে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় সরিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। একইসঙ্গে কূটনৈতিক এলাকায় সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি, সমাবেশ-মিছিল ও ঘেরাও কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর সরকারকে এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।

এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে গুলশান থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় এবং বনানী থেকে এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টির কার্যালয় সরাতে হবে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম