জাতীয় ঐক্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ বিএনপি

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০১৬, ১০:৪৩ এএম

জঙ্গিবাদ দমনে জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে বড় দুই জোটের বাইরে থেকে ডান ও বামপন্থি দলগুলোর তৎপরতা আপাতদৃষ্টিতে চোখের পড়ার মতো না হলেও তাদেরকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিল বিএনপি তা হয়তো আর পূরণ হচ্ছে না। সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে দলটির টালমাটাল অবস্থা এবং ওই সব রাজনৈতিক দলগুলো থেকে ‘প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ায়’ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ব্যর্থতার দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ইতোমধ্যে দুই জোটের বাইরে থাকা দলগুলো এরই মধ্যে আলাদাভাবে প্ল্যাটফর্ম গঠনের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে বাম দলগুলো বিএনপির সঙ্গে ঐক্য গড়ার কোনো প্রয়োজন দেখছে না। পাশাপাশি জামায়াত নিয়ে বিএনপির ‘লুকোচুরি’তে আশা হারিয়েছে অন্য দলগুলো। আর শর্তের বেড়াজালে জাতীয় ঐক্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিএনপির নেতারাও নিরাশ হচ্ছেন।

এদিকে বিএনপি তার সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়েও টালমাটাল অবস্থার মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলটি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতেও হিমশিম খাচ্ছে। দলের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে এরই মধ্যে ব্যাকফুটে চলে গেছেন। কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও। এই ক্ষোভ সামাল দিয়ে ফের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু করা বিএনপির জন্য কঠিনই হবে বলে মনে করছেন দলটির অনেকেই। আর শুরু করলেও সেটা কতটা ফলপ্রসূ হবে- তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

সদ্য ঘোষিত কমিটির একজন উপদেষ্টার ভাষ্যমতে, ‘কমিটি নিয়ে দলের যে পরিস্থিতি, তাতে বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষোভ নেভানোই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্য নিয়ে আপাতত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। কারণ, কমিটি নিয়ে ভবিষ্যতে আরো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

বিএনপির জাতীয় ঐক্যে যুক্ত হওয়া নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মঙ্গলবার বলেন, ‘বিএনপি এবং দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি সত্যিই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য চান, তাহলে জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে এর বিরুদ্ধে ফাইট করুক। এককভাবে আগে এটি করে দেখাক।’

বিএনপির সঙ্গে সিপিবির কর্মসূচি, নীতি এবং দর্শনে অনেক অমিল রয়েছে জানিয়ে এই বাম নেতা বলেন, ‘তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ঐক্য গড়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কারণ, তারা গণতান্ত্রিকভাবে দল পরিচালনা করতে পারে না। তারা মুক্তিযুদ্ধের নীতির সঙ্গে দেশ পরিচালনায় অক্ষম।’

সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য দল-মতনির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। উদ্দেশ্য ছিল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য, সিপিবি ও বাসদসহ সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোকে নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়া। এ জন্য দুই জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি। এর অংশ হিসেবে গত ৪ আগস্ট কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য নিয়ে আলোচনা করেন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকে বেশ কিছু শর্তের সঙ্গে আগে জামায়াত ছাড়ার প্রস্তাব দেন দলটির প্রধান কাদের সিদ্দিকী। যদিও পরে কাদের সিদ্দিকী গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, জাতীয় ঐক্য গড়তে তিনি সেখানে যাননি।

এদিকে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কচ্ছেদ নিয়ে সম্প্রতি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের দেয়া বক্তব্যকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘ব্যক্তিগত মত’ বলায় বিষয়টি নেতিবাচক হিসেবে দেখছে অন্য দলগুলো। ওই ঘটনার পর তারা একপ্রকার ধরেই নিয়েছে বিএনপি জামায়াত ছাড়বে না। সে জন্য খালেদা জিয়ার চা-চক্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ওই সব দল। তাদের মতে, জামায়াত নিয়ে বিএনপি লুকোচুরি করছে। মির্জা ফখরুলের ওই বক্তব্যের পর জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়ার চা-চক্রে যাচ্ছেন না তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াত পাশে থাকলে বিএনপি জাতীয় ঐক্য নিয়ে কী আলোচনা করবে, সেই প্রশ্ন রেখে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ‘জামায়াত থাকলে গণফোরাম থাকবে না।’

এদিকে দুই জোটের বাইরে থাকা দলগুলো কোনো দলের জাতীয় ঐক্যে না গিয়ে নিজেরাই আলাদা প্ল্যাটফর্ম গড়তে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে গত ৭ আগস্ট জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় বেশ কয়েকটি দলের নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। এতে অংশ নেন জেএসডি, বাসদ ও নাগরিক ঐক্যের নেতারা। পরবর্তী সময়ে গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, সিপিবি ও আরো কয়েকটি দলের নেতারা বসবেন বলে দলগুলোর সূত্র জানিয়েছে।

দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই জোটের বাইরে যেসব প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল আছে, তাদের নিয়ে একটি আলাদা বৃহত্তর ঐক্য গড়ার কাজ করছেন তারা। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের মাধ্যমে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এই লক্ষ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সামাজিক শক্তির সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হয়েছে।

বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বাসদের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো ওই জাতীয় ঐক্য নিয়ে আলোচনার জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসেনি। আর অন্য দলের জোটে যাওয়ার ইচ্ছাও বাসদের নেই। বিএনপি তার জায়গা থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিতে পারে।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ