সম্মেলনের নতুন মাত্রা পুতুল-জয়-ববি

  • সুজন আকন, মেহেদী হাসান, নিউজরুম এডিটর  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০১৬, ০৯:০০ পিএম

ঢাকা: দেশের সবচেয়ে প্রাচীন আর ঐহিত্যবাহী দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে এবার নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। এ সম্মেলন থেকেই বের হয়ে আসবেন আধুনিক মননের একঝাঁক তরুণ নেতৃত্ব। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকেই প্রতিনিধিত্ব করবেন। আগামীতে তারাই দলের হাল ধরার প্রস্তুতি নেবেন। এমন আশা সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের। 

দলীয় রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার সক্রিয় হওয়ার বিষয় নিয়ে অনেকদিন ধরেই চলছিল আলোচনা। নেতাকর্মীরাও আশা করছিলেন যে কোনো মুহূর্তে শেখ রেহানা তার পিতার স্বপ্নপূরণে বড় বোন শেখ হাসিনার সহযাত্রী হবেন।  শেষ অবধি সেই প্রত্যাশা পূরণ হতে যাচ্ছে। এবারই প্রথম আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলর হচ্ছেন শেখ রেহানা। তাকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ থেকে কাউন্সিলর করা হয়েছে।

একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রীপুত্র বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয় রাজনীতিতে সক্রিয় হোক- এই দাবি আর প্রত্যাশা ছিল সর্বপর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক (আইসিটি) উপদেষ্টা পদে সজীব ওয়াজেদ নিয়োগ পাওয়ার পর এ সম্ভাবনা আরো বাড়তে থাকে। ফলস্বরূপ, রংপুর থেকে তিনি এবার কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দিচ্ছেন জাতীয় সম্মেলনে।

দেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও প্রধানমন্ত্রীকন্যা শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সায়মা হোসেন পুতুল। তিনি গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্কুল সাইকোলজিস্টের সদস্যও। এসব কাজ করতে গিয়ে তিনি গণমাধ্যমের দৃষ্টি বিশেষভাবে আকর্ষণ করেছেন। তাই তাকে নিয়েও নেতাকর্মীরা প্রত্যাশার বীজ বোনা শুরু করে। 

তবে পুতুলও নেতাকর্মীদের হতাশা করছেন না। দলের জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলর হয়ে যোগ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর এ নাতনিও। শুধু কি তাই? তার স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতুও থাকছেন তার সঙ্গে। তারা দুজনই ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। মিতু বর্তমান সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে। পুতুল-মিতু দুজনই কানাডা প্রবাসী।

সূত্রমতে, এর আগে জানানো হয়েছিল পুতুল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা থেকে কাউন্সিলর হচ্ছেন। তবে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ কাউন্সিলদের যে তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছে তাতে পুতুল ও মাশরুর হোসেনের নামও আছে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে প্রথমবারের মতো ফরিদপুরের জেলার কাউন্সিলর করায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। 

আওয়ামী লীগের ২০তম এ জাতীয় সম্মেলনের আরেক চমক বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। তিনি এবার দলের জাতীয় সম্মেলনে আধুনিক তরুণ নেতৃত্বের আলো ছড়াবেন। ববি ঢাকা উত্তর থেকে জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিলর হচ্ছেন।

আগামী ২২-২৩ অক্টোবর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যানে হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। এই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সম্মেলনের থিম সং হিসেবে 'এখন সময় বাংলাদেশের, এখন সময় আমাদের' গানটি চূড়ান্ত করেছেন। এবারের পুরো সম্মেলনেই থাকছে চমক আর আধুনিকতার ছোঁয়া। 

সাধারণত, সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষমতা সব সময়ই থাকে কাউন্সিলদের হাতে। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই পরবর্তী কমিটি করা হয়। এতোদিন ধরে দলীয় প্রধান হিসেবে শুধু শেখ হাসিনাই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর থাকতেন। এবার তালিকা চূড়ান্ত হলে এ তালিকায় আসবেন বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, নাতি, নাতনি, নাতজামাইসহ মোট ছয়জন। তবে এসবই করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তারুণ্যের মাত্রা যোগ করতে।

শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির শুরুতে প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো নতুন নেতৃত্বের তাগিদ দিয়েছেন। ৭০ বছর বয়সী শেখ হাসিনা তিন যুগ ধরে পালন করে আসছেন দলীয় প্রধানের দায়িত্ব। জাতীয় কাউন্সিলের আগে আবারো নতুন নেতা নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে বললেন, ‘৮১ থেকে ২০১৬; ৩৫ বছর। আর, কত? নতুন নেতা নির্বাচন করেন।’

 এমন কথা বলেছেন এর আগেও। গত ২ অক্টোবর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার তো ৩৫ বছর হয়ে গেছে। আমাকে যদি রিটায়ার করার সুযোগ দেয়, তাহলে আমি সব থেকে বেশি খুশি হব।’

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের ত্রয়োদশ সম্মেলন। ওই সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলীয় প্রধান নির্বাচিত করা হয়। এরপরে ওই পদে আর কেউ আসেননি।

সোনালীনিউজ/এমএন