ঢাকা: চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির শীতল সম্পর্কের বরফ কিছুটা গলতে শুরু করেছে বলেই মনে করছেন শীর্ষ নেতারা। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দলীয় প্রধানের ফলপ্রসু বৈঠকের পর এমন বিশ্বাস বেড়েছে তাদের মধ্যে।
শুধু তাই নয়, সফরে আসা চীনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বিএনপির প্রতিনিধি দল। সেখানেও বিভিন্ন বিষয়ে ইতিবাচক কথাবার্তা হয়েছে। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করবে তারা। সেই সঙ্গে আরো বেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধা দেয়ার ব্যাপারেও কথা হয়েছে।
দলীয় সূত্রমতে, চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠককালে চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে তার প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। একই সময়ে স্মরণ করেছেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে চীনের সুসম্পর্কের বিষয়টিও। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার প্রতি চীনের সম্মান জানানোয় সন্তুষ্ট বিএনপির সর্বস্তরের নেতারা।
চীনকে আকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, চীনের সঙ্গে আজ অবধি বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হয়নি। সবসময় উন্নতির দিকে এগিয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্টের এবারের সফরের মাধ্যমে আরেকধাপ এগিয়েছে।
চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে ৪০ মিনিটের বৈঠকে বিএনপি প্রধান দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশ ‘গণতন্ত্রহীন’ অবস্থায় রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। তবে চীনা রাষ্ট্রপ্রধান এসব ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করলেও তার দেশের অবস্থান তুলে ধরেন। চীন শান্তিপূর্ণ বিশ্ব ও বাংলাদেশ দেখতে চায় বলে জানান।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে চীন যে ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে উন্নয়ন ক্ষেত্রে, তাতে বাংলাদেশ জোরালো সমর্থন জোগাবে।
প্রসঙ্গত, একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে অক্ষশক্তির প্যাঁচে পড়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল চীনের। তবে সেই অবস্থান খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর কূটনীতির পথে বাংলাদেশ পা বাড়ায় পূর্ব দিকে। সেখানে প্রথমেই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় চীন। ১৯৭৫ পরবর্তী চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। দীর্ঘ সময় এই সম্পর্ক সংহত থাকলেও তা হোঁচট খায় ২০০১ সালে। সে সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট ক্ষমতায় আসার পর চীনের সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। যেখানে মূলত ইস্যু ছিল তাইওয়ান। চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হওয়ার দাবি তাইওয়ানের অনেক দিনের। কিন্তু চীন সব সময়ই তাইওয়ানকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা করে আসছে।
২০০১ সালে বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসার পর সেই তাইওয়ানকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ঢাকায় তাইওয়ান কনস্যুলেট অফিস খোলে।এই ঘটনাটি চীন তাদের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ মনে করে এবং ঢাকায় তাইওয়ানের কনস্যুলেট অফিস খোলার তীব্র বিরোধিতা করে। তখন থেকেই মূলত বিএনপির ওপর ক্ষিপ্ত চীন। যার ফলে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরও অবনতি ঘটে। অনেকটা শীতল হয়ে যায় ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক।সেই থেকেই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপির কূটনৈতিক বিষয়াদি দেখাশোনা করেন সংশ্লিষ্ট এমন নেতারা জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দলীয় প্রধানের সাক্ষাতের জন্য। শেষ অবধি তারা সফল হয়েছেন।
সোনালীনিউজ/এমএন