সর্ববৃহৎ সম্মেলন, বিএনপির শুভকামনা-প্রশ্ন!

  • মেহেদী হাসান, নিউজরুম এডিটর  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০১৬, ০৭:০৬ পিএম

ঢাকা: নেতারা ঘোষণা করেছেন স্মরণকালের সবচেয়ে বড় চমকপ্রদ জাতীয় সম্মেলন উপহার দেবেন। দলের নিজস্ব বাজেটের মধ্যেই সবচেয়ে সুশৃঙ্খল আর দৃষ্টিনন্দন হবে সম্মেলনটি। দেশি-বিদেশি অতিথিসহ কাউন্সিলর আর ডেলিগেট থাকবেন ৩০ হাজারের বেশি। এর বাইরেও উদ্বোধনী অধিবেশনে উপস্থিত থাকবে হাজারো নেতাকর্মী। সব মিলিয়ে অর্ধলক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাগম হবে।

মাঝখানে আর মাত্র দু’দিন। এর মধ্যেই চোখ ধাঁধানো-বর্ণিল সাজে সেজে উঠেছে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। পুরো রাজধানী জুড়েই আলোক সজ্জা।  রাজধানীর বাইরে জেলায় জেলায় যেন উৎসবের আমেজ। নেতাকর্মীদের মধ্যেও কৌতুহলের শেষ নেই। নতুন নেতৃত্বের চমকের অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন তারা।

আগামী আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর দেশের সবচেয়ে প্রাচীন আর ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক ২০তম এই জাতীয় সম্মেলন ঘিরে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোও। এর মধ্যে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির শীর্ষনেতারা শুভ কামনা জানিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বসে সাংবাদিকদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে এর সফলতা কামনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সম্মেলন সফল হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনার জন্যে তারা ভূমিকা পালন করবেন। সম্মেলনের আমন্ত্রণ পেলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও বলেছেন।

সম্মেলনের সফলতা কামনা করে স্বাগত জানালেও কিন্তু ব্যয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান। বিগবাজেটের সম্মেলনের ব্যয় নিয়ে তার সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এতো বড় সম্মেলন, এতো জৌলুস সৃষ্টির সম্মেলন। বিশাল গেইট করেছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। আওয়ামী লীগের যে সভা সেই সভায়ও যে হিসাবটা দেখলাম- লক্ষ নয়, কোটি কোটি টাকার ব্যাপার। এই টাকাটা কোথায় থেকে আসছে, সেটা আমরা কেউ জানি না।’

তবে বিএনপি থেকে এমন প্রশ্ন তোলার অনেক আগেই দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন আওয়ামী লীগের দলীয় তহবিল থেকেই জাতীয় সম্মেলনের সব ব্যয় বহন করা হবে। আর এর বাইরে সম্মেলন সামনে রেখে কেউ যদি চাঁদাবাজি কিংবা কোনো অনিয়ম করে, তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।

শুধু তাই নয়, এর আগে গত ৩ অক্টোবর মন্ত্রীসভার বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় স্বয়ং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সম্মেলনে আর্থিক খরচের জন্য কারও কাছ থেকে চাঁদা নিতে হবে না বলেও জানিয়েছেন। তার কথা ছিল, দলের নিজস্ব যে ফান্ড রয়েছে তা থেকেই সম্মেলনের আর্থিক খরচ মেটানো যাবে।

সম্মেলন উপলক্ষে শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানই নয় গোটা রাজধানীসহ সারা দেশে দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জার প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। বিশাল আয়োজনের এ সম্মেলন সম্পন্ন করতে আর্থিক ব্যয়ের পরিমাণও দাঁড়াবে বড় অঙ্কের। 

সূত্রমতে, সম্মেলনকে স্মরণীয় করে রাখতে অতিথিদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থায় কমতি রাখছে না দলটি। বিদেশি অতিথি, রাজনৈতিক কর্মী, অন্যান্য অতিথিসহ ৫০ হাজার লোকের খাবারের মেন্যু হিসেবে রাখা হয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি ও  মোরগ পোলাও। সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত খাদ্য উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সম্মেলনের খাদ্য উপকমিটির আহ্বায়ক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন, বিদেশিদের জন্য বিশেষ বা আলাদা কোনো খাদ্যের ব্যবস্থা থাকবে না। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের জন্য দুটি বুথ থাকবে। এ ছাড়া প্রত্যেক বিভাগের জন্য আলাদা করে খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। বিদেশি প্রতিনিধিসহ অন্য অতিথিদের জন্য ১৫টি বুথ থাকবে। প্রতিটি বুথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ জন সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক ১০০ জন এবং দুজন করে কেন্দ্রীয় নেতা থাকবেন।

ত্রাণমন্ত্রী আরো জানান, উদ্বোধনী দিন ২২ অক্টোবর দুপুর ও রাত, পরদিন ২৩ অক্টোবর দুপুরেসহ মোট তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় এর পরবর্তন আনা হবে।

খাদ্য উপকমিটির সদস্য সচিব ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানান, প্রথম দিন দুপুরে থাকবে মোরগ পোলাও। রাতে থাকবে কাচ্চি বিরিয়ানি। পরদিন দুপুরেও থাকবে মোরগ পোলাও। আর প্রতি বেলা খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করা হবে বোতলজাত পানি, কোমল পানীয়, ফিরনি, পান এবং টিস্যু পেপার। এর বাইরে দুটি চা ও কফি কর্নার থাকবে।

দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দলের জাতীয় সম্মেলনের আর্থিক চূড়ান্ত বাজেট সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে একাধিক সূত্রমতে, এ সম্মেলনে তিন থেকে চার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। যা আসবে নিজস্ব ফান্ড থেকেই।

সোনালীনিউজ/এমএন