রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের ফিরে আসা নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০৩:০৭ পিএম
ফাইল ছবি

কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় দলটিকে নতুন ও আরও জটিল রাজনৈতিক সংকটে ঠেলে দিয়েছে। চব্বিশের ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর প্রায় ১৫ মাস ধরেই দলটির নেতাকর্মীরা বিপর্যস্ত সময়ে চলছিলেন। সর্বশেষ রায় সেই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুললো।

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন। পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় তার দণ্ড হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।

শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নন, তার ওপরই দাঁড়িয়ে ছিল দলটির পুরো রাজনৈতিক কাঠামো। সিদ্ধান্ত, নীতি ও নেতৃত্ব-সবই ঘুরপাক খেতো একমাত্র তাকে কেন্দ্র করে। তার বিকল্প হিসেবে কাউকে ভাবার মতো অবস্থাতেও পৌঁছায়নি দলটি। এমন পরিস্থিতিতে দলের প্রধান নেতার মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দলটির মূলধারায় স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসার সম্ভাবনাও আরও ক্ষীণ হলো।

রায়ের পর আওয়ামী লীগ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। দলের নেতারা বলছেন, এটি সাজানো ও পূর্বনির্ধারিত রায়। মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে ছিল উসকানিমূলক বক্তব্য, আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা।

রায়ের পর দলটির মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী আরাফাত আন্তর্জাতিক মাধ্যমে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আদালত যে সাজানো নাটক মঞ্চস্থ করেছে তার পরিণতিই এই রায়। বিচার শুরু হওয়ার আগেই রায়ের কাঠামো ঠিক করা ছিল বলে তিনি দাবি করেছেন।

এদিকে রায়কে কেন্দ্র করে রোববার ও সোমবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া এই কর্মসূচির সমর্থনে দলটির আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরাও নতুন করে সক্রিয় হয়েছেন। গত ১৩ নভেম্বর তারা ঢাকায় লকডাউন কর্মসূচিও দিয়েছিল। এসব কর্মসূচির পর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুনসহ কয়েকটি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে-যা জনমনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। দলটির বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।

গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। সেদিন দুপুরের পর শেখ হাসিনা ভারতে পাড়ি জমান। একই দিন থেকে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। শীর্ষ পর্যায়ের বহু নেতা দেশ ছাড়েন। ফলে দলটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পতনের পর কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়। এ পর্যন্ত কাউকেই প্রকাশ্যে সংগঠিত দেখা যায়নি। বহু নেতা গ্রেপ্তারও হয়েছেন।

এরই মধ্যে গত মে মাসে আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রকাশনা, প্রচারণা, সভা–সমাবেশ থেকে শুরু করে অনলাইনেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। পরে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে।

দলটির প্রধান নেতার মৃত্যুদণ্ড হলেও ভারতেই নিরাপদে আছেন শেখ হাসিনা-এমনটাই মনে করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ভারত তাকে হস্তান্তর করবে না বলেও তারা বিশ্বাস করেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, দিল্লির অবস্থানও অপরিবর্তিত-শেখ হাসিনাকে বিশেষ পরিস্থিতিতে সাময়িক মানবিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়।

আওয়ামী লীগ এখন তাই একটি অনিশ্চিত মোড়ে দাঁড়িয়ে। দলের প্রধান নেত্রী দণ্ডিত, দল নিষিদ্ধ, অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে। এই পরিস্থিতিতে দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাবে-সে উত্তর অনিশ্চয়তার ঘন কুয়াশায় ঢাকা।

 এসএইচ