নির্বাচনী ‘হোমওয়ার্কে’ ব্যস্ত বিএনপি

  • সুজন আকন, নিউজরুম এডিটর | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০১৬, ০২:২৫ পিএম

ঢাকা: নির্বাচনকালীন ‘রোডম্যাপ’ তৈরি ও রাজনীতির মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে হোমওয়ার্ক শুরু করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। অতীত ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে এই রোডম্যাপ তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও অভিজ্ঞদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই, কর্মী-সমর্থকদের সমন্বয় করার ক্ষেত্রে অতীতের ব্যর্থতাগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে সুপারিশ করা হচ্ছে দলের নীতি নির্ধারকদের কাছে। 

সূত্রমতে, এক দশক ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই চান না দলের ব্যর্থতার পরিণতি দেখতে। তাদের মূল দাবি, যেকোনো ভাবেই হোক, নির্বাচনে অংশ নেয়া ও সংসদে যাওয়া।

গেল ২৬ জুলাই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী সংসদ নির্বাচনের কাজ শুরু করতে এমপিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশনাকে প্রধানমন্ত্রীর আগাম নির্বাচনের চিন্তা-ভাবনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমলে নিয়েছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের প্রশ্ন ছিল, আগামী নির্বাচন যদি ২০১৭ সালের মধ্যেই হয় অথবা ২০১৮-এর শুরুতে হয়, তাহলে বিএনপি কী করবে? সেই প্রশ্ন থেকেই নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ তৈরিতে নানান ছক আঁকতে শুরু করে বিএনপি।

তবে ওই ঘটনার তিন মাস পর জাতীয় সম্মেলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগাম নির্বাচন যে ২০১৯ সালের আগে হবে না তা স্পষ্ট করেছে। সেই সঙ্গে জনগণের দ্বারে দ্বারে যেতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল থেকে পাওয়া এ মেসেজ বিএনপির নির্বাচনী রোডম্যাপকে অন্যমাত্রা দিয়েছে।

দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনী রোডম্যাপের অংশ হিসেবে মাঠ জরিপসহ নানা হিসাব-নিকাশের পাশাপাশি দলের সংস্কারপন্থী নেতাদের ব্যাপারে ‘নমনীয়’ হয়েছেন দলীয় প্রধান। ওই সব নেতাদের দলে ‘ফিরিয়ে আনা’র বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবও দেখিয়েছেন।

তবে দলের ভেতরে থাকা কট্টরপন্থী অংশের নেতারা এ ব্যাপারে পুনঃবিবেচনার কথা বললেও উদারপন্থীরা মনে করছেন, দেশের সংকটময় অবস্থায় দল-মত নির্বিশেষে যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন চেয়ারপারসন, তা বাস্তবায়ন করতে আগে দলের ভেতর ঐক্য প্রয়োজন। তাই দলের ভেতরের বিভেদ রেখা মুছে ফেলতে উদ্যোগ নিয়েছেন দলীয়প্রধান।

তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন আর দলীয় প্রধানের প্রতি আনুগত্য রয়েছে- এমন যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়েই করা হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির কমিটির ‘সুপার ফাইভ’ নেতাদের ব্যক্তিগত তথ্যাদিও সংগ্রহ করার কাজ চলছে।

যদিও নিন্দুকরা বলছেন, বিএনপির রাজনীতি এখন নিয়মিত দুই-একটি সভা, সেমিনার, সংবাদ সম্মেলনের মধ্যেই আটকে আছে। দাবি আদায়ে আন্দোলন দূরের কথা পরিকল্পনাহীন রাজনীতিতে দলের পুনর্গঠনসহ ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণ নিয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন বলেই মনে করছেন তারা।

তবে দলের নীতিনির্ধারকরা জানান, ২০১৭ সালের এপ্রিলের মধ্যেই দেশে নতুন জাতীয় নির্বাচনের আশা করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী দলের সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজও শুরু করে বিএনপি। 

দলের প্রভাবশালী একজন ভাইস চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, অক্টোবর মাসের প্রথম দিন থেকেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। দলের দুজন স্থায়ী কমিটির সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যান, একজন যুগ্ম মহাসচিব, একজন সাংগঠনিক সম্পাদক, একজন সহদপ্তার সম্পাদক এবং বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ের কাজের সঙ্গে ইতিমধ্যেই সম্পৃক্ত হয়েছেন।

এ ছাড়া দলের অন্যতম একজন প্রভাবশালী স্থায়ী কমিটির সদস্যকে ইতিমধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির দায়িত্বও দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ব্যাপারে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আগামীকালও যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়, তাতে অংশ নিতে আপত্তি নেই।

সোনালীনিউজ/এমএন