কোথায় যাচ্ছে বিএনপি?

  • নিয়ন মতিয়ুল | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০১৭, ০৬:২২ পিএম

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি কয়েক দফায় রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দেশ শাসনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। দলের বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তিন দফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। এছাড়া রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্তপল্লী পর্যন্ত দলটির রয়েছে বিশাল কর্মীবাহিনী ও সমর্থক। সেই সঙ্গে শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দীর্ঘদিনের পরীক্ষায় শক্তিশালী কাঠামোও তৈরি হয়েছে।

তবে দেশের আলোচিত বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলের সেই রাজকীয়তা এখন অনেকটাই ম্লান। বিগত ১০ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে তারা। এতে দলীয় কাঠামো, নেতৃত্ব, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে নিজেদের সরে নিয়ে নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়ে দলটি। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা করে তারা।তবে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথের আন্দোলনে শক্তি ক্ষয় করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে বিশাল কর্মীবাহিনী। বেশিরভাগ নেতাও হয়ে পড়েন নিষ্ক্রিয়।

এমন পরিস্থিতিতে প্রবল প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে বার বার মার খেতে থাকে একসময়ের দাপুটে এই রাজনৈতিক দলটি। বিশেষ করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী হিসেবে চিহ্নিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে সরকারবিরোধী সহিংস আন্দোলনে নেমে নিন্দিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য দলের ভেতর থেকেই তাগিদ বাড়তে থাকে। যদিও এখন পর্যন্ত নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়নি।

রাজনৈতিক দর্শন অনুযায়ী গতিবিধি নির্ধারণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে গাইড করার ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই থাকে শক্তিশালী পরামর্শকটিম। পেছন থেকে তারাই সামনের দিকে পরিচালিত করে দলকে। এসব পরামর্শককে দলের থিংকট্যাংক হিসেবে ভাবা হয়। যারা দলে সক্রিয় বা সংশ্লিষ্ট না থেকেও কাজ করেন সমান্তরালভাবে।

বিএনপিরও রয়েছে শক্তিশালী একটি থিংকট্যাংক। যাদের মধ্যে রয়েছেন সর্বজনবিদিত বুদ্ধিজীবীরাও। অতীতে দলের অনেক কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে তাদের দেখাও গেলে বর্তমানে তারা রহস্যজনকভাবে নীরব হয়ে গেছেন। গেল ৬ মাস ধরে কোনো কর্মসূচিতে তাদের দেখাও মিলছে না।

বিগত সময়ে দলের চরম সংকট মুহূর্তে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক ভুল করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে দলের ভেতর থেকেই। এসব নিয়ে আলোচিত-সমালোচিত হতে থাকেন বিশেষ করে দলের চালিকাশক্তি গাইড তথা পরামর্শকরা। আত্মবিশ্লেষণ করার তাগিদ পান তারা। এ নিয়ে আড়ালে আবডালে চলে আলোচনাও। তবে এসব ঘটনার পরেই নীরব হয়ে যান সেসব বুদ্ধিজীবী।

দলীয় সূত্রমতে, বিএনপির ভেতর উদারপন্থি ও স্বাধীনতার পক্ষের একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার ক্ষেত্রে বার বার নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। বিগত সময়ের সহিংসতার দায়মুক্তির বিষয় নিয়েও জোরদার তর্কবিতর্ক চলছিল। যদিও শেষ অবধি এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি দলটি।

এর মধ্যেই কয়েক মাস আগে জামায়াত ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের থিংকট্যাংক হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদসহ একটি অংশের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে বেশ অস্তস্তিতে পড়তে হয় দলকে। তারপর থেকেই অনেক সভা ও বৈঠকে শীরক দল জামায়াতের কোনো নেতার আগমন ঘটেনি। এরপরেও বিষয়টি থেকে গেছে অমীমাংসিতই।

দলের ভেতরে থাকা রক্ষণশীল নেতাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হলেও জামায়াত বর্তমানে নিজেদের নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করে ফেলছে। তারা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতাসহ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। তাই তাদের সঙ্গ ত্যাগ করার কোনো যুক্তি নেই। 

তবে উদারপন্থিদের কথা, যেকোনো ভাবে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করাই হবে ভবিষ্যতের জন্য কল্যাণকর। কারণ আধুনিক প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য সবার আগে অতীতের কলঙ্ক মোচনের প্রশ্ন আসে। 

সূত্রমতে, স্পর্শকাতর ইস্যুতে দলের থিংকট্যাংক হিসেবে পরিচিত বুদ্ধিজীবীদের নীরবতায় সক্রিয় হয়েছেন গবেষণা সেলের নেতারা। তারাই অদৃশ্যভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারুণ্যভরা এই থিংকট্যাংক বিএনপিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা-ই এখন দেখার বিষয়। 

সোনালীনিউজ/এমএন