কী করছে জামায়াত!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০১৭, ০৭:৩৭ পিএম

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। শীর্ষ নেতারা নানা কৌশলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা জাগানোসহ কর্মব্যস্ত করে তুলছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে নির্বাচনী ব্যস্ততা সবচেয়ে বেশি। তবে বসে নেই দেশের অন্যতম প্রধান দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলও (বিএনপি)।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে বিএনপির সর্বোচ্চ প্রচার-প্রচারণা নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা জাগিয়েছে। ইতোমধ্যে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলবিচ্ছিন্ন ‘সংস্কারপন্থি’ নেতাদের দলে ভিড়িয়েছেন। ভেদাভেদ ভুলে নির্বাচনী এলাকায় ও সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশও দিয়েছেন।

তবে এতো সব ডামাডোলের মধ্যে নিশ্চুপ হয়ে আছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম। অনেকটা গা-ছাড়া ভাব। নাসিক ও কুসিক নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে কোনো সমন্বয় করতে দেখা যায়নি। দলীয় প্রার্থীর প্রচারে দেখা মেলেনি জামায়াতের মধ্যম সারির কোনো নেতাকেও। কুসিকে কাউন্সিলর পর্যায়ে জামায়াতপন্থি কয়েকজন জয়লাভ করলেও তাতে সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না।

মূলত, শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসি কার্যকর, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন স্থগিত, দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লার বিলুপ্তি ও সর্বাত্মক দমনপীড়নে অনেকটা দিশাহারা জামায়াত। এ পরিস্থিতিতে আপাতত কোনো ধরনের নির্বাচন না করার কৌশল নিতে যাচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। দলীয় কর্মসূচিতে আংশিক পরিবর্তন এনে জনকল্যাণমুখী রাজনীতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পন করছেন তারা। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী ১৫ বছর রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকা মঙ্গলজনক মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।

তবে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধীতাকারী এ দলটি শীর্ষস্থানীয় নেতাদের শাস্তি পরবর্তী নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে। বর্তমান বাস্তবতাও অনুকূল নয়। এ অবস্থায় দলটির অনেক নেতাকর্মী পলাতক বা আত্মগোপনে। জামায়াতের অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক ইসলামী ব্যাংকও হাতছাড়া। এ পরিস্থিতিতে জামায়াতের পরিকল্পনা কী হতে পারে বা হওয়া উচিত তা নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন শীর্ষ নেতারা।

নির্বাচনমুখী রাজনীতি, না বিশ্বের ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর মতো সেবা ও কল্যাণমুখী ধারায় নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করে দীর্ঘমেয়াদি সফলতার দিকে ঝুঁকবে, এমন প্রশ্ন দলের নেতাকর্মীদের। নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

স্থানীয় পর্যায়ে জনসমর্থন ও প্রভাব-প্রতিপত্তির ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে ঘোষিত বা অঘোষিতভাবে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় আসার কথাও ভাবছেন নীতিনির্ধারকরা। সংগঠনের থিংকট্যাংক হিসেবে পরিচিত কয়েকজনের অভিমত, আগামী নির্বাচনে জামায়াতকে মাঠে নামতে হবে। তবে তা ঘোষিত বা অঘোষিতভাবে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে।

নিজস্ব দলীয় প্রতীক ও রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি না থাকায় সমমনা দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াতের নির্বাচনকে আদর্শগত পরাজয় হিসেবে ধরে নিতে পারেন সক্রিয় নেতারা। এতে দীর্ঘস্থায়ী ভাঙন ও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে দলটি।

মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধীতাকারী এ দলটি শীর্ষস্থানীয় নেতাদের শাস্তি পরবর্তী নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে। বর্তমান বাস্তবতাও অনুকূল নয়। এ অবস্থায় দলটির অনেক নেতাকর্মী পলাতক বা আত্মগোপনে। জামায়াতের অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক ইসলামী ব্যাংকও হাতছাড়া। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই আগামীর কর্ম পরিকল্পনা করার কথা ভাবছেন নীতিনির্ধারকরা।

জামায়াতপন্থি হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জামায়াত যদি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে, এতে দলের অপেক্ষাকৃত লিবারেল মানসিকতার মানুষদের বিএনপির দিকে ঝোঁকার সম্ভাবনা থাকবে। অন্যদিকে বিএনপির লিবারেল মন-মানসিকতার লোকরা কখনো তুলনামূলকভাবে কঠোর ও শুদ্ধতাবাদী জামায়াতের কর্মনীতিকে গ্রহণ করবে না।

সোনালীনিউজ/এন