বিএনপির নির্বাচনী পালে মন খারাপের হাওয়া

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২১, ২০১৭, ১১:১৪ এএম

ঢাকা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিতে চলছে জোর প্রস্তুতি। নতুন ধারার রাজনীতির প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইতিমধ্যে ঘোষিত হয়েছে ‘ভিশন-২০৩০’। এর আলোকেই গঠিত হচ্ছে নির্বাচনী ইশতেহার। আগামী নির্বাচনে ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনতে ব্যস্ত দলটি। তৃণমূলকে উজ্জীবিত ও সক্রিয় করতে কেন্দ্রীয় ৫১টি টিম জেলা সফরও শুরু করেছে।

নির্বাচনের পালে হাওয়া বইতে শুরু করেছে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই। ক্ষমতাসীনদের পাশাপাশি বিএনপিও নিজেদের গুছিয়ে নিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আচমকাই বিএনপির নির্বাচনী পালে মন খারাপের হাওয়া এসে ধাক্কা দিলো তাদের।

শনিবার (২০ মে) সকাল ৭টায় অনেকটা আকস্মিকভাবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। এক ঘণ্টা পর সকাল ৮টার দিকে কার্যালয়ের মূল ভবনে ঢোকেন পুলিশ সদস্যরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা তল্লাশি শেষ করে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খালি হাতে ফিরে আসে পুলিশ। তল্লাশি শুরুর আগে খালেদা জিয়ার এই কার্যালয় ও এর আশপাশের সড়কগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ।

প্রায় আড়াই ঘণ্টা ওই এলাকায় সাধারণ কোনো যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীদের সশস্ত্র প্রহরা ছিল। সকাল ৯টার দিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কার্যালয়ের সামনে আসেন। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তিনি কার্যালয়ের ভেতর যান। এর মিনিট বিশেক পর দলের আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ঘটনাস্থলে আসেন।

এ সময় বিএনপির শীর্ষ কোনো নেতাকে গুলশান কার্যালয়ে আসতে দেখা যায়নি। তবে পুলিশ চলে যাওয়ার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর রায়, জয়নাল আবদীন ফারুকসহ অনেক নেতাকর্মী সেখানে আসেন।

এদিকে তল্লাশির তীব্র নিন্দা জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে দেশের গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যাহত করতে চাচ্ছে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশি করে এটাই বুঝিয়েছে সরকার, যে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের লেসমাত্র নেই। বাংলাদেশ সম্পূর্ণ গণতন্ত্রবিহীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর সাহায্যে এই সরকার দেশ চালাচ্ছে। গতকাল শনিবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের নিজ বাসভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
 
তল্লাশির পর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ‘তালিকা’ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। পুলিশের গুলশান থানার পরিদর্শক আজিজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সেই ‘তালিকায়’ তল্লাশিতে প্রাপ্ত মালামালের পরিমাণ ‘শূন্য’ বলে উল্লেখ করা হয়। তবে সেখানে তল্লাশির স্থান হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ঠিকানা লেখা ছিল না। পুলিশের তল্লাশি শেষে কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকেন গণমাধ্যমকর্মীরা। মূল কলাপসিবল গেটটি খোলা ছিল।

কার্যালয়ের কর্মচারীরা জানান, এই গেটের তালা ভেঙে পুলিশ ভেতরে ঢোকে। একতলা ও দোতলার বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালানো হয় বলে তারা জানান। একতলার নয় নম্বর কক্ষটির দরজার লক খুলে তল্লাশি তৎপরতা বেশি ছিল। তবে লক ভাঙা পাওয়া গেলেও কাগজপত্র এলোমেলো ছিল না। বেশ কয়েকজন কর্মচারী বলেন, পুলিশ সঙ্গে মিস্ত্রি ছিল। এই মিস্ত্রিদের দিয়েই তালা ভাঙা হয়। আর ফাইলসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করেন পুলিশ সদস্যরা।

তারা জানিয়েছেন, তল্লাশি চালানোর আগে পুলিশ কার্যালয়ের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বন্ধ কর দেয়। এ সময় কার্যালয় থেকে বেশ কিছু কাগজপত্র ফটোকপি করে পুলিশ নিয়ে গেছে বলেও জানান তারা।

তবে দোতলায় তল্লাশি চালালেও খালেদা জিয়ার কক্ষে ঢোকেনি পুলিশ। এদিকে গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার ডকুমেন্টস রয়েছে। রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারপত্রের খোঁজে এ তল্লাশি চালানো হয়েছে। আদালতের অনুমতি নিয়েই তল্লাশি চালিয়েছি। তবে সেখান থেকে কোনো কিছু আমরা আনিনি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে দিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে সার্চ ওয়ারেন্ট করিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তল্লাশির এই ঘটনা দলের চেয়ারপারসনকে হয়রানি ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার লক্ষেই করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী আহমেদ। দলের নেতৃবৃন্দকে এ বিষয়ে আগে থেকে অবহিত করা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে সেই জিডির কপি দেখান বিএনপির নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। জিডিতে সময় হিসাবে গতকাল ১৯ মে সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিট লেখা ছিল। তবে গুলশান ঠিকানা উল্লেখ করা হলেও কোথায় বিএনপির কার্যালয় লেখা ছিল না। জিডিতে লেখা রয়েছে, গুলশান-২ নম্বরের ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়ি ও এর আশপাশের এলাকায় রাষ্ট্রবিরোধী ও আইনশৃঙ্খলাপরিপন্থী, রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিনষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের স্টিকার ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত সামগ্রী মজুতের খবর গোপন সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তল্লাশি করে ক্ষমতাসীনরা ষড়যন্ত্রের নতুন ফন্দি আঁটছে। সরকারকে বলব, বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কোনো ফায়দা নিতে পারবে না কেউ। নতুন ধারার রাজনীতির সংস্কৃতি সৃষ্টি করতেই আমরা ভিশন-২০৩০ দিয়েছি।

এতে সাধারণ মানুষও উজ্জীবিত হয়েছে। বিএনপির ভিশন-২০৩০ সাধারণ মানুষ সমৃদ্ধির সোপান হিসেবে নিয়েছে। তাই কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই