এরশাদের ২৪ মার্চের মহাসমাবেশে কী চমক থাকছে?

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০১৮, ০৫:০৭ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকা: নির্বাচনের বছর সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এশাদের জাতীয় পার্টির প্রতিটি মুভমেন্টকেই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন রাজনীতিজ্ঞরা। এর কারণ হলো বরাবরই এরশাদ যা মুখে বলে নির্বাচনের আগে তার বিপরীতটা করে থাকেন। বছরের শুরুতেই বাংলাদেশের রাজনীতির তিন মাথা (শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া ও এরশাদ) সিলেটে হযরত শাহ জালালের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। শেখ হাসিনা ও এরশাদ মাঠে থাকলেও খালেদা জিয়া দুর্নীতির একটি মামলায় জেলে আছেন। এমন সময় এরশাদ আগামী ২৪ মার্চ দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একটি মহাসমাবেশের আয়োজন করেছেন। সেখানে তিনি একটি চমক দিতে পারেন বলে দলটির সূত্র জানিয়েছে। এ জন্যই সমাবেশকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা গুঞ্জন। 

যদিও দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার দাবি, আগামী ২৪ মার্চ রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ থেকে বড় ধরনের কোনো চমকপ্রদ ঘোষণা আপাতত আসছে না।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত বছর পহেলা জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের পর আর কোনো বড় শোডাউন করেনি সংসদে বিরোধী দল হিসেবে থাকা জাতীয় পার্টি। দলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৪ মার্চ এ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক দল, দেশের মানুষ ও বিদেশি বন্ধুদের কাছে নিজের শক্তি জানান দিতে এ মহাসমাবেশে জনতার ঢল নামাতে চান এরশাদ। 

নির্বাচনের আগে স্মরণকালের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ও ব্যাপক শোডাউনের মধ্য দিয়ে আগামী ২৪ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ থেকেই নিজেদের শক্তির জানান দিতে চায় জাতীয় পার্টি। যদিও এ সমাবেশ জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে ৫৮-দলীয় সম্মিলিত মহাজোটের ব্যানারে আয়োজন করা হয়েছে। 

এরশাদের এই চমক কী হতে পারে? জাতীয় পার্টির ওই সূত্র একটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদের বরাত দিয়ে বলেছে, বিএনপি ও ২০ দলের মধ্যে থেকে কেউ কেউ ওই সমাবেশে থাকতে পারে। তারা আসলে কী কারণে থাকবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়ার জন্য নাকি সৌজন্যতা দেখাতে। সেই বিষয়টি পারিষ্কার করেনি সূত্রটি।  

দলটির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মহাসমাবেশে পাঁচ লক্ষাধিক জনতার ঢল নামাতে সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে জাতীয় পার্টি। এ জন্য বর্তমান এমপিদের পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সংশ্লিষ্ট সবাইকেই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে কমপক্ষে তিন হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক নিয়ে মহাসমাবেশে উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন এরশাদ। 

সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে সিলেট, রংপুর, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহে সাংগঠনিক সফর সম্পন্ন করেছে দলটি। এ মহাসমাবেশ সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতারা সারা দেশে ছুটে বেড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে দলের প্রেসিডিয়াম, নির্বাহী পরিষদসহ একাধিক সভাও অনুষ্ঠিত হয়। সব নেতাকর্মীকে ঢাকামুখী করতেই এ প্রচেষ্টা ও কর্মসূচি। এ সমাবেশে এরশাদ কী ঘোষণা দেবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলসহ নিজ দলের মধ্যে নানান আলোচনা চলছে। মহাসমাবেশ থেকে দলীয় নেতাকর্মী ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। 

সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ও তার স্ত্রী সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ মন্ত্রিপরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেন। রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে দলের তিন সদস্যকে মন্ত্রীদের সরিয়ে দিতে আহ্বান জানান। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। আসলেই কি জাপা মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চায়, না রাজনৈতিক মাঠ গরম করছে। তবে ২৪ মার্চের সমাবেশে পদত্যাগের কোনো ঘোষণা আসছে না বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, এ সমাবেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বক্তব্য দেবেন। তার বক্তব্যে ঘুষ, দুর্নীতি, হত্যা, ধর্ষণ, গুম, রাহাজানির বিষয় উঠে আসবে। এ ছাড়া ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, কয়েকটি ব্যাংকে অর্থ সঙ্কট নিয়ে কথা বলবেন তিনি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি নিয়ে এরশাদের বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। কেন ৫৮-দলীয় সম্মিলিত মহাজোট গঠন করা হয়েছে, সে সম্পর্কেও বলবেন তিনি। 

দলের সিনিয়র নেতারা জানান, প্রাদেশিক সরকার, নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার ও পূর্ণাঙ্গ উপজেলা প্রবর্তনের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এ ছাড়া জনকল্যাণমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর বিষয়গুলো ইশতেহারে প্রাধান্য পাবে। শান্তির জন্য পরিবর্তন-পরিবর্তনের লক্ষ্যে জাতীয় পার্টি- স্লোগানকে সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহারে ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার মাধ্যমে সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা পুনঃস্থাপন, বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ দলীয়করণমুক্ত করা, মাদক নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদানসহ আট থেকে ১০টি বিষয় থাকছে। 

জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, ২৪ মার্চের মহাসমাবেশে রাজধানীতে পল্লীবন্ধু এরশাদের পক্ষে জনতার ঢল নামবে। সমাবেশে সারা দেশের পাশাপাশি ঢাকা শহরের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও মহল্লা থেকে লাখো জনতা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হবে। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ২৪ মার্চ ঢাকার রাজপথ থাকবে পল্লীবন্ধু এরশাদের দখলে। আর এ সমাবেশ সার্বিক সফলের মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে ভিন্ন বার্তা দেবে জাতীয় পার্টি। 

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা বলেন, আগামী রাজনীতি ও নির্বাচনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। সদ্য সমাপ্ত কয়েকটি নির্বাচনে জনগণ তারই প্রমাণ দিয়েছে। ২৪ মার্চের মহাসমাবেশকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। সারা দেশ থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মীর ঢল নামবে সমাবেশে। সেদিন সারা দেশের মানুষকে আমরা দেখাতে চাই জাতীয় পার্টি কতটা শক্তিশালী। এর মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করব, আগামী নির্বাচনের জন্য জাতীয় পার্টি প্রস্তুত। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই