দুই সিটিতে নতুন মুখ, বুঝে-শুনে দেয়া বিএনপির একটি চাল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০১৮, ০৭:০৩ পিএম

ঢাকা: গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। খুলনায় সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং গাজীপুরে সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার। নির্বাচনের নানা শঙ্কার কথা মাথায় রেখেছে দলটির মনোনয়ন বোর্ড। গত নির্বাচনে দুই সিটিতে বিজয় উপহার দিলেও দ্বিতীয়বারের মতো প্রার্থী করা হয়নি গাজীপুরের নগরপিতা অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও খুলনার নগরপিতা মনিরুজ্জামান মনিকে। রাজনৈতিক বৈরী হাওয়া এবং সরকারের নতুন চালের পাল্টা কৌশল নিতেই এমন সিদ্ধান্ত এসেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য। 

গত ৫ এপ্রিল বিকাল ৫টা পর্যন্ত ছিল বিএনপির মনোনয়নপত্র বিক্রির শেষ দিন। ওইদিন গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সাত প্রার্থী দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। বিকাল পৌনে ৫টা পর্যন্ত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনি ও জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা। এবার নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতিতে গত নির্বাচনে সরে দাঁড়ান মনা। মনি-মনার দ্বন্দ্ব খুলনায় ওপেনসিক্রেট। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে নির্ধারিত সময়ের মাত্র ১৫ মিনিট আগে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে হয় সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে। অন্যদিকে গত নির্বাচনে গাজীপুরের মান্নানের হাতে ধানের শীষ দিতে হাসান সরকারকেও এবারের প্রার্থী করার প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়।

গত ৮ এপ্রিল রোববার সন্ধ্যায় মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয় মনোনয়ন বোর্ড। একই দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও বিএনপি সময় নিয়েছে একদিন। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে দল সমর্থিত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। 
সাক্ষাৎকার শেষে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, তিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে আগ্রহী। তাই মেয়র পদে নির্বাচন করতে চাই না। মনোনয়নপত্রও সমর্থকরা তুলেছেন।

দুই সিটিতে কোন বিবেচনা থেকে নতুন প্রার্থী- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, আমাদের বোর্ড দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে। একটি সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা মোকাবেলা, অন্যটি বিজয় ধরে রাখা। বিএনপির কাছে তথ্য আছে, নির্বাচন কমিশন দুই সিটির নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নাও করতে পারে। অধ্যাপক মান্নান ও মনিরুজ্জামান মনি দুজনই বর্তমান মেয়র। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী বর্তমান (মেয়র) পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে। দায়িত্ব পালন করবেন প্যানেল মেয়ররা। যদি দুই মেয়র পদত্যাগ করেন এবং যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনও না হয়, তাহলে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি। ক্ষতির শিকার হবেন মেয়র মনি-মান্নানও। তাতে সরকারের উদ্দেশ্যই হাসিল হবে। আর নির্বাচন হলে নতুন মুখ দিয়ে বিজয় ধরে রাখা সম্ভব বলে বোর্ডের মতামত। 

এ ছাড়া হাসান উদ্দিন সরকারের কাছে দেয়া দলীয় প্রধানের পুরনো প্রতিশ্রুতি পূরণ হলো। আর খুলনায় মনা-মনির বাইরে কাউকে প্রার্থী করাতে দ্বন্দ্ব কেটে যাবে- এমনটাই দুই নীতিনির্ধারকের বিশ্লেষণ। 

এ প্রসঙ্গে খুলনায় বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইমলাম মঞ্জু বলেন, ঢাকা উত্তরের নির্বাচন স্থগিতের পর থেকেই আমরা একটা শঙ্কা নিয়ে আছি। শঙ্কা কাটেনি। তবে আমরা ভোটের মাঠে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। গাজীপুরের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারও মনে করেন, সরকার ভরাডুবির শঙ্কায় নগ্ন পথ বেছে নিতে পারে। তবে সেটাও বিএনপির জন্য শাপেবর হবে বলে তার বিশ্লেষণ।

সোনালীনিউজ/জেএ