কিশোরগঞ্জ : ভৈরবের মাহবুব, শাহ্ পরান ও শামীম কাজ করতেন সৌদি আরবের দাম্মামের আলকাতিফ এলাকায়। গত ৬ জুন রাত ৯টার দিকে কোম্পানির কফিলের উদ্দেশে রওনা দেন মাহবুব। সঙ্গে ছিলেন শাহ্ পরান ও শামীম। ওই সময় এলাকায় সিয়া ও সুন্নি সংঘর্ষে কারফিউ জারি ছিল। কিন্তু তারা সেটি না জানায় গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে সৌদি পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের দাম্মানের ‘আবুমি’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার শামীম ও শাহ পরানকে মৃত ঘোষণা করেন। মুমূর্ষু অবস্থায় মাহাবুব চিকিৎসাধীন।
সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু না জানালেও সেদেশে থাকা নিহতদের স্বজনরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শাহ পরানের তিন ভাই জাফরান, মিজান, ইমরানুল জানান, মৃত্যুর ছয়দিন পার হয়ে গেলেও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পরিবারকে কিছুই জানানো হচ্ছে না। তাদের মরদেহ আবুমি হাসপাতালেই রাখা আছে।
নিহত শামীম ভৈরবের চণ্ডিবের গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে ও শাহ্ পরান একই গ্রামের মো. নুরু মিয়ার ছেলে। তারা তিনজন ওইদিন থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পরে ১১ জুন রাতে আহত মাহবুবের মাধ্যমে প্রথমে নিহতদের খবর পায় পরিবার।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শামীম চার মাস আগে সৌদি আরবে যান। তার স্বপ্ন ছিল বড় মেয়েকে ডাক্তার বানানোর। সেই স্বপ্ন নিয়ে ৪০ বছর বয়সেও বিদেশে পাড়ি জমান। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। গত শনিবার খবর আসে তাদের বাবা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
যাকে ডাক্তার বানানোর জন্য শামীম বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন সেই এসএসসি পড়ুয়া মেয়ে তামান্না নুসরাত তমা বলে, ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিদেশ গিয়েছিলেন বাবা, কিন্তু মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর এলো। আমাদের সংসার অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে। এখন আমাদের শেষ ইচ্ছা বাবার লাশ দেখা। দুই হাত দিয়ে মাটি দেয়া।
অন্যদিকে শাহ্ পরান ও তার তিন ভাই দাম্মাম শহরে গাল্ফ প্যাক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ফরক্লিক নামের গাড়িচালক। তারা ১৪ বছর ধরে সেখানে বসবাস করে আসছিলেন। শাহ্ পরান ছয় মাসের ছুটি শেষ করে কিছুদিন আগে সৌদি যান।
তার বাবা নুরু মিয়া বলেন, এমন তরতাজা ছেলেটারে গুলি করে হত্যা করলো কিন্তু সৌদি সরকার আমাদের কিছুই জানায়নি। আল্লাহ্ ও রাসুলের (স) দেশে এমন মৃত্যু সহ্য করতে পারছি না।
সোনালীনিউজ/ এসও