নগরবাসীকে নিয়ে ঢাকা গড়ার অঙ্গীকার মেয়র আতিকের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২০, ০১:৫৫ পিএম

ঢাকা : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করেই কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমি নির্বাচিত মেয়র, কিন্তু নগরবাসী সবাই মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারে।

মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধায় জনতার মুখোমুখি নগর সেবক কর্মসূচির আওতায় নগর বাসীর সাথে লাইভ আলাপচারিতায় মেয়র এসব কথা বলেন।

লাইভে যুক্ত হয়ে নগরবাসী একের পর এক প্রশ্ন করে গেছেন মেয়রকে। তিনিও ধৈর্য ধরে পৌনে দুই ঘণ্টা লাইভে থেকে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

কোন কোন প্রশ্নের জবাবে নগরবাসীর ভুল ধারণা ভাঙ্গিয়ে দিয়েছেন। কোনটার তাৎক্ষণিক প্রতিশ্রুতিতে সমাধান দিয়েছেন, কোনটির জন্য সময় চেয়েছেন। আর কোনোটির জন্য চেয়েছেন নগরবাসীর সহযোগিতা। সবাইকে নিয়ে সবার ঢাকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন মেয়র।

আলাপচারিতার সঞ্চালক ছিলেন চিত্রাভিনেতা ফেরদৌস। তিনি সংযোগ ঘটিয়েছেন জনতার সঙ্গে মেয়রের।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলাপচারিতা শুরু হয়, দর্শকের করা প্রশ্নের উত্তরের মধ্য দিয়ে। পরিচ্ছন্ন নগর ঢাকা ‘কীভাবে করা হবে?’ উত্তরে শুরুতেই মেয়র আতিকুল ‘ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি’ স্লোগানটিকে সামনে আনেন। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন উত্তর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম ও প্রয়াত মেয়রের কথা। তার নেয়া কিছু উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন।

তবে মেয়র বললেন, শহর ঢাকা এতটাই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে যে, কাজগুলো থেকে সুফল পাওয়া কষ্টসাধ্য। তিনি বলেন, ‘রাজউক নগরে বড় বড় ভবন করেছে, কিন্তু এসব ভবনে সৃষ্ট ময়লা কোথায় ফেলা হবে সে ব্যবস্থা করেনি।’

মেয়র জানান, অটোমেশনে যাচ্ছে নগর পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে রোড সুইপার কেনা হয়েছে।

নগরের ময়লাকে কীভাবে সম্পদে পরিনত করা যায় সে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বর্জ্যবিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগের কথা জানালেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। রাজধানীর আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে এই বর্জ্যবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

খালগুলো দখলমুক্ত করার প্রশ্নে মেয়র বলেন, জনগণের শক্তি নিয়ে তিনি এসব দখলকারী পেশি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। জানালেন, খালমুক্ত করে দুইপাশে ওয়াকওয়ে করে দেয়া হবে। গাছ লাগানো হবে। ৫ জনের হীনস্বার্থের কারণে ৫শ’ জন কষ্ট পেতে পারেনা বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এডিস মশা নিধন প্রশ্নে মেয়রের বলেন, ‘স্বাস্থ্য জনগণের মৌলিক অধিকার এ বিষয়ের প্রশ্নে আমি আনন্দিত। গতবছর দায়িত্ব নেয়ার পরপরই এই মশার প্রাদুর্ভাবে ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়ে। আমরা অনেক প্রিয় নগরবাসীকে হারিয়েছি। তখন আমি সময় চেয়েছিলাম এবং এবছর আমরা মশার লার্ভা ধ্বংসে চিরুনি অভিযান চালিয়েছি। তাতে এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ততটা ছড়াতে পারেনি।

তবে মেয়র সেই উদাহরণও সামনে আনলেন, যাতে তিনি এক ধনাঢ্য পরিবারের কথা তুলে ধরেন। বাড়ির সামনে যেমন ছিলো ঝকঝকে দামি দামি গাড়ি, পেছনটা ছিলো ততোধিকই নোংরা, এডিস মশার আবাসস্থল। মশক নিধনে তিনি নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।’

কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধনে ফোর্থ জেনারেশন ওষুধের ব্যবহার, লার্ভিসাইড, এডাল্টিসাইড ব্যবহারের কথা জানিয়ে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করলেন তিনি।

সড়কে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন নিয়ে প্রাণি প্রেমিদের উদ্বেগের বিষয়ে নিজে সহমর্মিতা প্রকাশ করে মেয়র আতিকুল বলেন, পশু-পাখি ও গাছের প্রতি তারও প্রেম রয়েছে।

নগরে যারা পশুপালন করেন এমন অনেককে ডেকে পরামর্শ করে, রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া যায় তার উপায় বের করা হয়েছে। কুকুরগুলোকে ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে বন্ধ্যাকরণ যার একটি অন্যতম পথ, জানান ডিএনসিসি মেয়র। তিনি স্পষ্ট করে ঘোষণা দেন-উত্তর সিটি কর্পোরেশনে একটি কুকুরও মেরে ফেলা হবে না।

নগরে মাথার উপর ঝুলে থাকা তার অপসারণ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এ ব্যাপারে আমার সোজাসাপ্টা কথা, যার তার লাগিয়েছে তারাই খুলে নেবে।

সড়কগুলো ট্রাকের দখলে থাকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সড়কগুলো ট্রাকের দখলমুক্ত করা একটা যুদ্ধ। নগর এতটাই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে যে এগুলো রাখার জায়গাও নেই। তবে এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ও সমাধান করবে, কথা দেন মো. আতিকুল ইসলাম।

বস্তিবাসীর জন্য নির্বাচনী অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে মেয়র জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বস্তিগুলোতে হাইরাইজ ভবন গড়ে তুলে সেগুলোতে তাদের থাকার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

কর্মসূচিতে মেয়র জনগণের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। একাধিক ফেসবুক পাতা ও অন্যান্য মাধ্যমে একযোগে প্রচারিত লাইভ অনুষ্ঠানটি কয়েক লাখ ভিউয়ার দেখেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই