সংস্কার ৩ কোটি টাকার, তছনছ মাত্র দুই বছরেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২১, ০২:২৮ পিএম

ঢাকা : শিশু-কিশোরদের বিনোদন এবং খেলাধুলার জন্য ২৫ কাঠা আয়তনের পার্কটি আধুনিকায়ন করেছিল সিটি করপোরেশন। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। কিন্তু দুই বছরের মাথায়ই পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনকারী ঘাস উঠে গেছে। গাছপালা এবং রাইডগুলো তছনছ হয়ে গেছে। যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা।

এই চিত্র পুরান ঢাকার বংশালের সিক্কাটুলীর শহীদ বুদ্ধিজীবী খালেক সরদার পার্কের। ২০১৭ সালের জুনে এই পার্কটি উদ্বোধন করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু উদ্বোধনের পর পার্কটির তত্ত্বাবধানে কোনো জনবল নিয়োগ বা সুনির্দিষ্ট কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

তারা জানান, সঠিক তদারকি বা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পার্কটি এখন পরিত্যক্ত প্রায়। এর দায় ডিএসসিসিকেই নিতে হবে।

ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্টদের দাবি, পার্কটি দেখভালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মহল্লার গণ্যমান্যদের বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা সঠিকভাবে পরিচালনা করেননি। এখন পার্কের সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে করপোরেশনের তিন কোটি টাকা জলে গেছে।

জানা গেছে, ঢাকাকে পরিবেশবান্ধব ও সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ২০১৬ সালে ‘জল সবুজে ঢাকা’ নামে একটি প্রকল্প নিয়েছিল ডিএসসিসি। এর আওতায় ডিএসসিসির ১৯টি পার্ক ও ১২টি মাঠ সংস্কার বা আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। তারই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের জুনে খালেক সরদার পার্কের সংস্কারকাজ শুরু হয়। কাজ শেষে ২০১৯ সালের ১৬ মে পার্কটির উদ্বোধন করেন ডিএসসিসির তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পার্কের সৌন্দর্য ধরে রাখতে মহল্লার লোকজনকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার মাতৃসদন থেকে প্রায় ১০০ মিটার পশ্চিমে শহীদ বুদ্ধিজীবী খালেক সরদার পার্ক। সরেজমিনে দেখা যায়, ত্রিভুজ আকৃতির পার্কটির চারপাশ উন্মুক্ত। ফলে সবদিক থেকেই পার্কে ঢোকা যায়। তবে পার্কের মধ্যে শিশুদের রাইডগুলোর চারপাশে লোহার জাল দিয়ে বেড়া দেয়া। এর ফটকে তালা লাগানো থাকলেও ভেতরের রাইডগুলো (দোলনা, স্লিপার) ভেঙে পড়ে রয়েছে। পার্কের উত্তর ও পশ্চিম পাশে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে। নালার ঢাকনাগুলো উল্টে আছে। এতে বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

পার্কটির সংস্কারের দায়িত্ব পেয়েছিল এইচএমএইচ ও এইচসি (জেবি) নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের নামে কাজটি বাস্তবায়ন করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নোয়াব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আমিনুল হক বিপ্লব। তিনি কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক।

আমিনুল হক বলেন, ‘প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে পার্কটি আধুনিকায়ন করে ডিএসসিসিকে হস্তান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু করপোরেশন সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। এখন পার্কটি দেখলে আফসোস লাগে।’

সিক্কাটুলী এলাকাটি ডিএসসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন বলেন, ‘পার্কটি উদ্বোধনের পরপরই এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুজন নিরাপত্তাকর্মী এবং দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দিতে বলেছিলাম। কিন্তু করপোরেশনের কেউ গুরুত্ব দেননি।’

শহীদ বুদ্ধিজীবী খালেক সরদার পার্কে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলেন সিক্কাটুলীর বাসিন্দা সাদেক হোসেন। তিনি বলেন, ‘পার্কটি উদ্বোধনের কিছুদিন পরই মুসলিম যুব সংঘ নামে একটি সংগঠন মাঠের ভেতর ঈদের জামাত আয়োজন করে। এজন্য তারা পার্কের মাঝে মাটি খুঁড়ে সামিয়ানা টানায়। এতে তখনই সব ঘাস উঠে যায় এবং নতুন লাগানো গাছগুলো ভেঙে যায়। কিছুদিনের মধ্যে সবগুলো রাইডও ভেঙে যায়।’

জানতে চাইলে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মুন্সি মো. আবুল হাসেম বলেন, ‘ডিএসসিসির পার্ক এবং মাঠগুলো রক্ষণাবেক্ষণে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। শহীদ বুদ্ধিজীবী খালেক সরদার পার্কের এই দুরবস্থার কথা জানা নেই। পার্কটি সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই