রমণীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ১০ উপদেশ

  • মুফতি সাদিক হোসাইন | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২০, ০৪:১২ পিএম

ঢাকা : আরবের বিখ্যাত এক মহীয়সী নারী তার সদ্য বিবাহিত কন্যাকে শ্বশুরালয়ে যাওয়ার সময় দশটি উপদেশ দিয়েছিলেন। মুসলিম রমণীরা যদি সেগুলো মেনে চলেন তাহলে তাদের সংসার, পরিবার জান্নাতের সুখ শান্তির নমুনা হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

তাই সে উপদেশগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরছি-

প্রথম উপদেশ : অল্পে তুষ্ট থাকা। তিনি প্রিয় কন্যাকে বলেন, হে আমার প্রিয় কন্যা, আমার চোখের শীতলতা, জীবনসঙ্গী স্বামীগৃহে অল্পে তুষ্ট থাকার অভ্যাস করবে। সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবে। ডাল-ভাত মিলে তার ওপর তুষ্ট থাকবে। স্বামী সন্তুষ্ট হয়ে যদি শুকনো রুটির ব্যবস্থা করেন তাকে মুরগি পোলাও থেকে উত্তম মনে করবে। সস্বাদু খাবার ও মূল্যবান পোশাক-পরিচ্ছদের জন্য স্বামীকে কখনো চাপ দেবে না।

দ্বিতীয় উপদেশ : মান্যতা ও আনুগত্যের সাথে জীবনযাপন করা। হে কলিজার টুকরা আমার, স্বামীর প্রতিটি কথা সর্বদা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং তার আদেশের প্রতি গুরুত্ব দেবে। তার নির্দেশ যে কোনো মূল্যে আমল করার চেষ্টা করবে। তাহলে তুমি তার হূদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে পারবে। কারণ আমাদের সমাজে মানবদেহের মূল্য কেবল তার সুন্দর ব্যবহার ও আচরণে।

তৃতীয় উপদেশ : সাজসজ্জা ও রূপ দ্বারা স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা। হে আমার আদরের মেয়ে, রূপচর্চার প্রতি খেয়াল রাখবে। স্বামী যখন তোমার দিকে তাকাবেন তখন তার দৃষ্টি দিয়ে যেন মোহাব্বতের বৃষ্টি বর্ষিত হয়। আনন্দে যেন তার হূদয় মন ভরে যায়। তাই সাদামাটা প্রসাধনী যা ভাগ্যে জোটে তা দিয়েই নিজেকে সাজিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। বিশেষ করে স্বামীর একান্তে সান্নিধ্যে যেতে সুগন্ধি অবশ্যই ব্যবহার করবে। স্মরণ রাখবে, তোমার দেহের কোনো পরিস্থিতি যেন স্বামীর নিকট ঘৃণিত মনে না হয়।

চতুর্থ উপদেশ : সুরমা ব্যবহার ও পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা। হে আমার স্নেহের কন্যা, স্বামীর দৃষ্টিতে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সদা সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। সুরমা ও কাজল দ্বারা নয়ন যুগলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে। কারণ সুরমামাখা আকর্ষণীয় চোখের মনোহরণী দর্শকের দৃষ্টিকে সহজেই কুপোকাত করতে পারে। নিয়মিত গোসল ও অজুর সাথে থাকবে। কারণ, পানি সর্বোত্তম খুশবু এবং পরিষ্কার-পরিছন্নতা অর্জনের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম।

পঞ্চম উপদেশ : সময়মতো খানা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা। প্রিয় কন্যা আমার, স্বামীর পানাহারের ব্যবস্থা সময়ের আগেই গুরুত্বের সাথে প্রস্তুত রাখতে ভুলবে না। কারণ ক্ষুধার প্রচণ্ডতা উৎক্ষিপ্ত অগ্নস্ফুিলিঙ্গের মতো। তা ছাড়া ক্ষুধামন্দা হয়ে গেলে মুরগি পোলাও অরুচিকর মনে হয়। স্বামীর বিশ্রামের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবে। কারণ, নিদ্রা অসস্পূর্ণ হলে মেজাজ রুক্ষ হয়ে যায়। আচার-আচরণ হয়ে যায় মায়া-মমতাহীন

ষষ্ঠ উপদেশ : স্বামীর গৃহে সম্পদের হেফাজত করা। হে নয়নের মণি কন্যা আমার, স্বামীর ঘর ও তার ধন-সম্পদের হিফাজত করবে। তার অনুমতি ব্যতীত অপরিচিত কেউ যেন গৃহে প্রবেশ করতে না পারে। তার সম্পদ অপচয় ও অপব্যয় করে নষ্ট করবে না। কেননা, ধন-সম্পদ সর্বোত্তম সংরক্ষত ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্ভব। আর সন্তানসন্ততির সুন্দরতম হিফাজত ও উত্তম প্রশিক্ষণ ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্ভব।

সপ্তম উপদেশ : স্বামী গৃহের গোপন কথা প্রকাশ না করা। আদরের দুলালী আমার, স্বামীর গোপন বিষয় কখনো অন্যের নিকট প্রকাশ করবে না। কেননা স্বামীর গোপন বিষয় যদি গোপন রাখতে না পারো, তাহলে তোমার প্রতি তার আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে এবং বিশ্বাস উঠে যাবে।

অষ্টম উপদেশ : সুখ-দুঃখে স্বামীর সাথে শরিক থাকা। হে স্নেহাপদ আমার, স্বামী যদি কোনো কারণে ব্যথিত হয়, তাহলে তার সামনে নিজের কোনো আনন্দ প্রকাশ করবে না। বরং তার দুঃখে দুঃখিত হয়ে তাকে সান্ত্বনা দেবে। পক্ষান্তরে স্বামীর আনন্দের সময় নিজের অন্তরের আচ্ছাদিত দুঃখ-বেদনার কথা বা কোনো পেরেশানির ছাপ চেহারায় প্রকাশ পেতে দেবে না। স্বামীর নিকট তার আচরণের প্রতিবাদ করবে না। কারণ, প্রথমটিতে মনের ব্যথা দূরীভূত হবে। আর দ্বিতীয়টিতে মনের ব্যথা পুঞ্জীভূত হবে।

নবম উপদেশ : স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখা। আদরের কন্যা আমার, তুমি যদি স্বামীর অন্তরে ভালোবাসার পাত্রী হতে চাও, তাহলে তার মান-সম্মান ও ইজ্জতের প্রতি খুব খেয়াল রাখবে। তার চাহিদা অনুযায়ী জীবনযাপন করবে। তাহলে তুমিও জীবনের ধাপে ধাপে প্রতিটি ক্ষতে ক্ষতে তাকে উত্তম স্বামীরূপে উপস্থিত পাবে, ইনশাআল্লাহ। স্বামীকে ভালোবাস, চিরদিন তাকে কাছে পাবে।

দশম উপদেশ : স্বামীর চাওয়া-পাওয়াকে নিজের ওপর প্রাধান্য দেওয়া। স্নেহের কন্যা আমার, জেনে রাখো, যতক্ষত স্বামীর সন্তুষ্টি ও আনন্দের স্বার্থে স্বীয় অন্তরকে দুঃখের আগুনে দগ্ধ না করবে এবং তার সন্তুষ্টিকে নিজের সন্তুষ্টি ওপর প্রাধান্য না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার জীবনে আনন্দ হবে না। তোমার দাম্পত্য জীবন সুখময় হবে না। তাই নিজের সন্তুষ্টির ওপর স্বামীর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেবে। প্রিয় কন্যা আমার, উল্লিখিত উপদেশসহ আমি তোমাকে আল্লাহতায়ালার হাতে অর্পণ করছি। মহান আল্লাহতায়ালা তোমার জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে তোমার ভাগ্য লিপিতে মঙ্গলের সিদ্ধান্ত নেবেন এবং সর্বপ্রকার অমঙ্গল থেকে হেফাজত করবেন ইনশাআল্লাহ। আমিন।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া শায়খ আবদুল মোমিন, মোমিনশাহী