বিদায় রহমত, মাগফিরাত শুরু

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০১৬, ০৫:২৯ পিএম

বিদায় নিল মাহে রমজানের রহমতের দশ দিন। আজ থেকে শুরু মাগফিরাতের দশ দিন। শেষ দশ দিন নাজাতের। এগার থেকে বিশ রমজান পর্যন্ত মাগফিরাত।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন মজিদে এরশাদ করেন, ‘আর তিনিই (আল্লাহ) তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা আশ শুরা : ১৫)

কোরআনে করিমের এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, বান্দা যখনই খালেছ নিয়তে তওবার মাধ্যমে কবিরা গুনাহ থেকে ক্ষমা চান, আল্লাহ বান্দার তওবা কবুল করে তাকে ক্ষমা করে দেন। একইভাবে যেকোনো ছগিরা গুনাহর জন্য মাফ চাইলে, আল্লাহ সেই পাপগুলোও ক্ষমা করে দেন।

মূলত আল্লাহ পাকের এই ঘোষণা সবসময়ের জন্য। আর মাহে রমজানের এই দশ দিনে যদি কেউ রোজা রেখে এবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে একাগ্রচিত্তে নিজের ছগিরা ও কবিরা গুনাহর জন্য ক্ষমা চান, তাহলে তো অবশ্যই আল্লাহ পাক তার সব গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে নিষ্পাপ হয়ে যান। তবে শর্ত থাকে যে, তিনি আর কখনো পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে পারবেন না, অর্থাৎ আগের মতো গুনায় লিপ্ত হতে পারবেন না।

মাগফিরাত অর্থ ক্ষমা। রমজানের এই দশ দিনে বেশি করে নিজের কিংবা পিতা-মাতা ও অন্যের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করুন। ক্ষমা প্রার্থনা করুন। অবশ্যই আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দেবেন।

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় কিয়ামে রমজান আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমুহ মাফ করে দেওয়া হবে।(সহিহ বুখারি- ২য় খণ্ড)

মাহে রমজান আমাদের জন্য মাগফিরাতের সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। এই সুযোগকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমরা সার্থক। আমাদের রোজা রাখা, ক্ষমা চাওয়া, প্রার্থনা সবই সফল হবে।

প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, `মাহে রমজানের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন- হে পূণ্য অন্বেষণকারী, অগ্রসর হও। হে পাপাচারী, থামো, চোখ খোলো। তিনি আবার ঘোষণা করেন- ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে।’

প্রিয় নবীর (সা.) ফরমান অনুযায়ী, মাগফিরাতের এই মাসে আমরা নিজেদের পাপের জন্য বেশি করে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাই। কৃতকর্মের জন্য বেশি করে অনুশোচনা করি। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের দোয়া এই মাগফিরাতের মাসের উছিলায় কবুল করবেন।

মূলত রমজান মাস বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ এক উপহার স্বরূপ। যা যথাযথভাবে আদায় করতে পারলে সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যায়। নিষ্পাপ হিসেবে মুক্তি মিলবে বান্দার।

হজরত আলী (রা.) বলেন, যদি আল্লাহ তাআলার উম্মতে মোহাম্মদীকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে রমজান ও সুরা এখলাস শরিফ কখনো দান করতেন না। (নুযহাতুল মাজালিস, ১ম খণ্ড)

আসলেই এই রমজান মাস এসেছে আমাদের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে অতীত গুনাহ থেকে মুক্তি দিয়ে বান্দাকে খাঁটি বান্দায় পরিণত করতে। রমজান মোবারক পেয়েও যারা কাজে লাগাতে পারল না, নিজেদের গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে?

রমজানে মাগফিরাতের গুরুত্ব বর্ণনা করে প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়ে নিষ্পাপ হতে পারল না, তার মতো হতভাগ্য এই জগতে আর কেউ নেই।’

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এ মাসে চারটি কাজ অবশ্যকরণীয়। দুটি কাজ এমন যে, তার দ্বারা তোমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হন। অবশিষ্ট দুটি এমন, যা ছাড়া তোমাদের কোনো গত্যন্তর নেই। এই চারটি একটি কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা, দ্বিতীয়টি অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার বা ক্ষমা চাওয়া। এ দুটি কাজ আল্লাহর দরবারে অতি পছন্দনীয়... (ইবনে খুজাইমা)

তাই আসুন, রমজানের মাগফিরাতের এই দশ দিনে নামাজ, দোয়া, দান-সদকা, এবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন (আমীন)।

সোনালীনিউজ/এইচএআর