হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে ইসলামের যে নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি

  • ধর্মচিন্ত ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২, ০১:৩২ পিএম

ঢাকা : মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার অনেক বড় ধরনের নেয়ামত হচ্ছে সুস্থতা। সুস্থ মানুষ ও অসুস্থ মানুষ কখনই এক নয়। একজন সুস্থ মানুষ প্রতিটি কাজ যত সুন্দর ও নিখুঁতভাবে করতে পারেন, তা কখনই একজন অসুস্থ মানুষ করতে পারেন না। এই নেয়ামত আমরা তখনই উপলব্দি করি, যখন আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।

ইহকালীন ও পরকালীন সব ধরনের কাজের জন্যই একটি সুস্থ শরীর ও মন জরুরি। হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলার নিকট শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে অধিক উত্তম ও প্রিয়তর।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৬৪)।

অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্রাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ৫টি বিষয়কে ৫টি বিষয়ের পূর্বে গনিমত মনে করো। বার্ধ্যকের পূর্বে যৌবনকালকে, অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের পূর্বে প্রাচুর্যতাকে, ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে আর মৃত্যুর পূর্বে জীবনকালকে।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৯৭৬৭)।

উপরোক্ত হাদিসের মাধ্যমে যে বিষয়টি আমাদের নিকট স্পষ্ট, তা হলো মানবজীবনের ৫টি মূল্যবান বিষয়ের একটি হলো সুস্থতা। সুস্থ থাকতে হলে আমাদের অনেক বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে, যার মধ্যে অন্যতম হল খাদ্য।

খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন : বর্তমান সমাজে মানুষ না খাওয়ার চেয়ে বেশি খেয়েই অধিকতর নিজেকে অসুস্থ্যতা ও আকস্মিক মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। খাবার-দাবারের ব্যাপারে আমরা অনেকেই সচেতন নই। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়তই আমরা নিজেদের এক অজানা বিপদের দিকে দাবিত করছি। ভেজালমুক্ত এবং পরিমিত খাবার সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে বলতে গেলে যে বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট, তাহলো আমরা যা খাই তার অধিকাংশ খাবারই ভেজাল ও ত্রুটিযুক্ত। বাজারের ফলমূল, তরিতরকারি, মাছ ও মাংসসহ অনেক খাবারেই মিশ্রিত রয়েছে ‘ফরমালিন’ নামের বিষ। এমনকি আজকাল দুধেও মেশানো হয় অ্যান্টিবায়োটিক। একেতো ভেজালযুক্ত খাবার, তারমধ্যে আবার আমরা যখন খাই তখন অনেকেই কিন্তু খাবারের পরিমাণের দিকে ভ্রক্ষেপ করি না। বরং খাবার যদি স্বাদ হয়, তাহলে আমাদের অনেকেই পেটভরে খাই। এইধরনের খাদ্যাভাস ইসলাম ও বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেই বর্জনীয়।

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে নির্দেশনা : সম্প্রতি এক গবেষণার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘মানুষ যদি কম খায়, তাহলে তা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ’ সিডনি ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ’-এ কর্মরত প্রফেসর লুইগি ফোনটানা। তিনি তার গবেষণার মাধ্যমে এই বিষয়টি প্রমাণ করেছেন। প্রসিদ্ধ জার্নাল বা সাময়িক পত্রিকা ‘ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড অ্যান্ডোক্রিনলজি’-তে  তার লিখিত প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।

যে বিষয়টি আজ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেছে, ১৪৫০ বছর পূর্বে সেই একই বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন আমাদের প্রিয়নবী (সা.)। মিকদাম বিন মা‘দি কারুবা (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, আমি রাসূল (সা.)-কে বলিতে শুনেছি- ‘মানুষের জন্য পেটভরে খাওয়ার চেয়ে ক্ষতিকার আর কিছু নেই। তাদের জন্য ততটুকু খাবার খাওয়াই যথেষ্ট, যতটুকু খেলে পরে তার মেরুদণ্ড ঠিক থাকবে। তারপরেও যদি আরো বেশি খাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে সে তার পেটের এক তৃতীয়াংশ রাখবে খাওয়ার জন্য, এক তৃতীয়াংশ রাখবে পান করার জন্য আর অপর এক তৃতীয়াংশ রাখবে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০২)।

সব ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে যা করবেন : এই হাদিসের মাধ্যমে যেই বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে, তাহলো কম খাওয়া। যদিও রাসূল (সা.) এখানে কোনো নির্দিষ্ট করে কোনো রোগের কথা বলেননি। তবে তিনি বলেছেন এটি মানুষের জন্য ক্ষতিকারক।

অধিকাংশ চিকিৎসকদের মতে মানুষ রোগাক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো ‘অতিরিক্ত খাবার খাওয়া’। তাই আমাদের কে এই বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা: আরাফ, আয়াত: ৩১)।

অতিরিক্ত খাওয়াও এক ধরনের অপচয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের তার দ্বীন সঠিকভাবে মেনে ও সুন্নাত তারিকায় চলার তাওফিক দান করুন।

লেখক: ড. নাজমুল হাসান (পিএইচডি, কোরআন অ্যান্ড সুন্নাহ স্টাডিজ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া)