‘আর দশটা হাফেজের চেয়ে নাহিদুলের হাফেজ হওয়ার গল্পটা ভিন্ন’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২২, ০১:৩৮ পিএম

ঢাকা : স্কুলে পড়লেও মুহাম্মদ নাহিদুল ইসলামের মন পড়ে থাকতো মাদরাসায়। আলেমদের কণ্ঠে পবিত্র কোরআনের আয়াত শুনে আন্দোলিত হতেন নাহিদুল।

জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই হাফেজ হওয়ার স্বপ্নটা নড়ে উঠতো নাহিদুলের হৃদয়ে। তাই ফতুল্লার লালপুর পৌষারপুকুরপাড়ের মারকাযুন নুজুম ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসায় ভর্তি হয়ে মাত্র ৪ মাসে কোরআনে হাফেজ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জণ করেন তিনি।

নাহিদুলের বাবার মতে, হালাল রুজির ফল দিয়েছেন আল্লাহ। আর শিক্ষক বললেন, আর দশটা হাফেজের চেয়ে নাহিদুলের হাফেজ হওয়ার গল্পটা ভিন্ন।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, মাদরাসায় খাবারের সময় আধঘন্টা হলেও ১০ মিনিটে খাবার শেষ করে কোরআন পাঠে মনযোগী হতেন নাহিদুল ইসলাম। মাগরিব ও শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে মহান রবের দরবারে কান্নাকাটি করতেন। প্রার্থনা করতেন আল্লাহ যেন তার মহৎ আশা পূরণ করেন। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়ে নাহিদের মুখে উচ্চারণ হতো কোরআনের বাণী। তার মন, ধ্যান-জ্ঞান জুড়ে থাকতো একটাই চাওয়া। সরল, নিষ্পাপ এ কিশোরের দোয়া কবুল হয়েছে- তাই মাত্র ১২০ দিনে কোরআনে হাফেজ হওয়া সম্ভব হয়েছে।

মাদরাসার অধ্যক্ষ ও লালপুর পৌষারপুকুরপাড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতী ইয়াসিন আকরাম চৌধুরীর মতে, মহান আল্লাহ চেয়েছেন বলেই এ অসম্ভব সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, নাহিদুল ইসলাম যে হাফেজ হয়েছে, তা অন্য দশটা হাফেজের মতো না। অন্যদের বাবা-মা ছোট বেলায় মাদরাসায় ভর্তি করায় আর নাহিদ জেনারেল লাইন থেকে ৭ম শ্রেণি পড়া অবস্থায় মাদরাসায় ভর্তি হয়ে হাফেজ হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নাহিদুলের সপ্তম শ্রেণিতে রেজাল্ট কিছুটা খারাপ হওয়ায়। বিষ্ময়কর ঘটনা ঘটলো। এখানে মহান আল্লাহ তা’য়ালার ইশারা রয়েছে। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে তিনি বলেন, আল্লাহ যেন তার আলেম হওয়ার স্বপ্নও পূরণ করেন।

নাহিদুলের বাবা মুহাম্মদ মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আমার ৩ ছেলের মধ্যে মেঝো ছেলেকে মাদরাসায় ভর্তি করলেও কয়েক পাড়া কোরআন মুখস্থ করলেও হাফেজ হতে পারেনি। তাই ছোট ছেলেকে হাফেজ করার স্বপ্ন ছিলো। যখন শুনলাম ছেলে হাফেজ হয়েছে, তখন আমরা পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছি।

নাহিদুল ইসলাম জানান, যখন আমি স্কুলে পড়ি তখন থেকে আলেমদের বয়ান খুব ভালো রাখতো। তখন থেকে স্বপ্ন দেখতাম আল্লাহ তাআলার কোরআন আমি আমার সিনায় নেবো। মাত্র চার মাসে কীভাবে সম্ভব হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি খুব কম ঘুমাতাম। অন্যদের খেলাধুলা করতে কিংবা বেড়াতে যেতে দেখলেও, আমি তা করিনি। এমনকি খাওয়ার সময় বাঁচিয়েও পড়ায় মনযোগী থাকতাম। এ

ভবিষ্যত স্বপ্ন নিয়ে নাহিদুল বলেন, আমার ইচ্ছা আমি হক্কানি আলেম হবো। পথভোলা মানুষকে আল্লাহর রাস্তায় ডাকবো।

এ ঘটনায় মাদরাসা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়রা উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এমন বিরল সাফল্য ধরে রাখতে হবে। যাতে কোরআনে হাফেজের সংখ্যা আরও বাড়ে। তারা নাহিদুল ইসলামের আরও সাফল্য কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, নাহিদুল ইসলামদের গ্রামের বাড়ি দিনাজুপুর জেলার ফুলবাড়ি থানার রাজারামপুর গ্রামে। সে গ্রামে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে পরিবারের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে আসে। মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার আগে সে হরিহরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যায়ররত ছিলো। অন্য দুই ভাই ও মা-বাবার সাথে বর্তমানে ফতুল্লার লালপুর পৌষারপুকুরপাড় এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই