সুগন্ধি ব্যবহার ইসলামে একটি প্রশংসনীয় ও উত্তম কাজ। এটি শুধু নান্দনিকতার অংশ নয়, বরং এটি সব নবীর অনুসৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেও সর্বদা সুগন্ধি ব্যবহার করতেন এবং মুসলমানদের তা করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন— “চারটি কাজ সব নবীর সুন্নত: সুগন্ধি ব্যবহার করা, বিয়ে করা, মিসওয়াক করা এবং লজ্জাস্থান আড়াল রাখা।” (মুসনাদে আহমাদ: ২২৪৭৮)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) দুনিয়াবি জিনিসের মধ্যে তিনটি বিষয়কে সবচেয়ে প্রিয় মনে করতেন— নামাজ, সুগন্ধি ও স্ত্রী। (সুনানে নাসাঈ: ৩৯৩৯)
বিশেষত জুমার দিনে সুগন্ধি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“আল্লাহ এই দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন বানিয়েছেন। তাই যে ব্যক্তি জুমার নামাজে আসে, সে যেন গোসল করে, মিসওয়াক করে এবং যদি সুগন্ধি থাকে, তবে তা ব্যবহার করে।”
(সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮৩)
আরেক হাদিসে তিনি বলেছেন,
“যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, নিজেকে পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার করে, তেল বা সুগন্ধি ব্যবহার করে, মসজিদে গিয়ে অযথা ভিড় না করে নামাজ আদায় করে এবং খুতবার সময় চুপ থাকে— তার এক জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব ছোটখাটো গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”
(সহিহ বুখারি: ৯১০)
বর্তমানে প্রচলিত সেন্ট, বডি স্প্রে বা আতর ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ইসলাম স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। যদি এতে অপবিত্র অ্যালকোহল বা নিষিদ্ধ উপাদান না থাকে, তবে তা ব্যবহার করা জায়েজ।
বিখ্যাত ইসলামী ফকিহ শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানি বলেন,
“বর্তমানে পারফিউম বা ওষুধে ব্যবহৃত অ্যালকোহলের বেশিরভাগই আর আঙ্গুর বা খেজুর থেকে তৈরি হয় না; বরং শস্যদানা, খনিজ পদার্থ বা অন্যান্য উৎস থেকে প্রস্তুত করা হয়। তাই এগুলো অপবিত্র নয়।”
(তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম, খণ্ড ৩, পৃ. ৬০৮)
সুতরাং, আজকের বাজারে থাকা অধিকাংশ অ্যালকোহলযুক্ত সেন্ট ও বডি স্প্রে ব্যবহার করা জায়েজ ও নামাজের উপযোগী— যদি না নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে এতে অপবিত্র উপাদান রয়েছে।
ইসলামী দৃষ্টিতে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও সুগন্ধি ব্যবহার শুধু সামাজিক সৌন্দর্য নয়, বরং এটি একটি নববী ঐতিহ্য— যা আত্মিক পবিত্রতারও প্রতীক।
এম