আসরের পর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বিশেষ আমল

  • ওবাইদুল হক, কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২৫, ০৪:১৬ পিএম
ছবি: প্রতীকী

ইসলামে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে জুমার দিনকে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ দিন মুসলমানদের রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের দরজা উন্মুক্ত থাকে। এ দিনে রয়েছে অসংখ্য ফজিলত ও নেকি অর্জনের সুযোগ। বিশেষ করে আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়কে আল্লাহর কাছে দোয়া কবুলের অন্যতম মুহূর্ত বলা হয়েছে।

ইসলামে জুমাবার একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দিবসসমূহের মধ্যে জুমার দিন শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত।’ (ইবনে মাজাহ: ১০৮৪)

হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।’ (মুসলিম: ৮৫৪)

হাদিস অনুযায়ী জুমার দিনের আসর সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় মুমিনদের জন্য বিশেষ কিছু আমলের কথা বলা আছে। আমলগুলোর মধ্যে রয়েছে দোয়া, জিকির, ইস্তেগফার ইত্যাদি। এছাড়াও আরেকটি আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, সেটি হলো-বিশেষ নিয়মে দরুদ পাঠ।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন আসর নামাজের পর ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নে উল্লেখিত দরুদ শরিফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হবে এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।’ (আফদালুস সালাওয়াত: ২৬)

দরুদটি হলো-
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَعَلَى آلِهِ وَسَلِّم تَسْلِيْمَا
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা।’

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘জুমার দিনে একটি বিশেষ সময় আছে, সে সময় বান্দা যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে অবশ্যই দেবেন।’ (সহিহ বুখারী: ৯৩৫, সহিহ মুসলিম: ৮৫২)

উল্লেখিত নিয়মের পাশাপাশি জুমার দিনে বেশি দরুদ পাঠের গুরুত্ব হাদিসে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়।’ (আবু দাউদ: ১০৪৭)

হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘তোমরা জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পড়ো। কারণ, জিব্রাইল (আ.) এইমাত্র আল্লাহ তাআলার বাণী নিয়ে হাজির হলেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘পৃথিবীতে যখন কোনো মুসলমান আপনার ওপর একবার দরুদ পড়ে, আমি তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করি এবং আমার সব ফেরেশতা তার জন্য দশবার ইস্তেগফার করে।’ (তারগিব: ৩/২৯৯)

হজরত আলি (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি নবী করিম (স.)-এর ওপর জুমার দিনে ১০০ বার দরুদ পাঠ করে, সে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় নূরের জ্যোতি দেখে লোকেরা বলবে—এই ব্যক্তি কী আমল করেছিল!’ (কানজুল উম্মাল: ১৭৪)

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যদি কোনো মুসলিম এ সময়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা দান করেন। এ মুহূর্তটি তোমরা আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো।’ (আবু দাউদ: ১০৪৮)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বর্ণনা করেছেন, শুক্রবারে আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়। বিখ্যাত সিরাতগ্রন্থ জাদুল মাআদে এসেছে, ‘জুমার দিন আসরের নামাজ আদায়ের পর দোয়া কবুল হয়।’

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلاَةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ، ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ

হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিন নামাজের জন্য আহ্বান করা হবে, তখন তোমরা দ্রুত আল্লাহর স্মরণের জন্য উপস্থিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ কর। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা বুঝতে পার। (সূরা জুমা, আয়াত: ৯)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিন দরুদের ব্যাপারে বেশি মনোনিবেশ করার তাওফিক দান করুন। আসর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সময়ে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এসএইচ