আজ আমরা পৃথিবীতে যখন সামান্য ভূমিকম্প অনুভব করি, কয়েক সেকেন্ডের দুলুনিতে আমাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। কিন্তু কেয়ামতের দিন সেই কম্পন হবে না; বরং এটি হবে পৃথিবীর চূড়ান্ত ধ্বংস, প্রলয়ের সূচনা। সেই দিনে সূর্য আর আলো দেবে না, আকাশ শান্ত থাকবে না, পৃথিবী তার ভারসাম্য হারাবে। মানুষ দিশেহারা হয়ে ছুটবে কিন্তু কোনো আশ্রয় পাবেনা।
ইসলাম আমাদের সেই দিনের জন্য সতর্ক করেছে, কারণ কেয়ামত শুধু ভয়ঙ্কর দিন নয়, এটি আমাদের আমলের হিসাব নেওয়ার দিন। রাসুলুল্লাহ বলেছেন, কেয়ামত এমন এক মুহূর্তে আসবে যখন মানুষ একেবারেই অপ্রস্তুত থাকবে। পৃথিবী তার শক্তি সহ্য করতে পারবে না, মানুষ হারিয়ে যাবে অসহায়তায়।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা স্মরণ করিয়েছেন, কেয়ামতের দিন পৃথিবী ভয়ংকরভাবে কেঁপে উঠবে। যখন পৃথিবী তার পূর্ণ শক্তিতে কেঁপে উঠবে এবং পৃথিবী তার ভেতরের যাবতীয় বোঝা বাইরে নিক্ষেপ করবে। বোঝা বলতে আমাদের কৃতকর্ম, মঙ্গল ও অসৎ কাজ বোঝানো হয়েছে। পৃথিবীর সমস্ত চরম শক্তি প্রকাশ পাবে, যা মানবজাতিকে আতঙ্কিত করবে।
রাসুলুল্লাহ বলেছেন, কেয়ামত আসবে না যতক্ষণ না পৃথিবী প্রচণ্ডভাবে কেঁপে ওঠে এবং পাহাড়গুলো শস্যগুচ্ছের মতো ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। পাহাড় আর শক্ত থাকবে না, তুলার মতো উড়তে থাকবে। সমুদ্র উত্তাল হবে অগ্নি-জ্বালায়, আকাশ ছিন্নভিন্ন হবে, সূর্য নিভে যাবে। শিশুদের চুল সাদা হয়ে যাবে সেই আতঙ্কে। মানুষের হৃদয় এমনভাবে নাড়া পাবে, যা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
সেদিন মানুষ আতঙ্কে দৌড়াবে, কিন্তু কোথাও নিরাপত্তা পাবে না। মা তার দুধের বাচ্চাকে ভুলে যাবে, গর্ভবতী নারী ভয়েই গর্ভপাত করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমন্ডলীও, মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সামনে, যিনি এক, পরাক্রমশালী। সেদিন পৃথিবীর আকার, পরিবেশ, অবস্থা-সবই বদলে যাবে। মানুষ ভুলে যাবে সে কে, তার পরিবার, সম্পদ, সম্মান। শুধু থাকবে একটাই চিন্তা-আমার পরিণতি কোথায়।
এই ভয়ঙ্কর বর্ণনা আমাদের ভীত করার জন্য নয়, বরং আমাদের সতর্ক করার জন্য। আজই নিজের জীবন ঠিক করার সময়। নামাজ ঠিক করুন, সৎ কাজ বাড়ান, অন্যের প্রতি সদয় হোন, পাপ থেকে দূরে থাকুন, তওবা করুন, প্রতিদিন অন্তত একটি নেক কাজ করুন যেন কেয়ামতের দিন আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করেন।
কেয়ামত ও প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্পের বর্ণনা আমাদের প্রস্তুত করার জন্য। সেদিন কেউ আমাদের রক্ষা করতে পারবে না-না পরিবার, না সম্পদ, না ক্ষমতা। যখন পৃথিবী ভেঙে পড়বে, আকাশ ছিন্ন ভিন্ন হবে, মানুষ দিশেহারা হবে-সেদিন একমাত্র নিরাপত্তা হবে আল্লাহর দয়া। আজই নিজের আমল ঠিক করে ফিরে যাই আল্লাহর দিকে, যেন সেই মহাদিন আমাদের জন্য শাস্তির নয়, মুক্তির দিন হয়ে ওঠে।
এসএইচ