নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় ১১টি সুন্নত

  • ধর্মচিন্তা ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০১৯, ০৮:৩৪ পিএম
ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: নামাজে অনেক সুন্নত রয়েছে। তাই যেভাবে মনে চায় সেভাবে দাঁড়ানো যাবে না। কারণ দাঁড়ানোটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়, বরং আমি এক মহান সত্তার আদেশ পালনার্থে দাঁড়িয়েছি। আমি যদি আমার ব্যক্তিগত কাজে দাঁড়াতাম, তাহলে যেভাবে মনে চায় সেভাবে দাঁড়াতে পারতাম। আর্মিরা যখন প্রশিক্ষণের জন্য লাইনে দাঁড়ায়, তখন কি তারা নিজ ইচ্ছামতো দাঁড়ায় নাকি যিনি তাদের কমান্ড করেন তার নির্দেশ মতো দাঁড়ায়?

অনেক সময় দেখা যায়, কেউ যদি বলেন, কাতার সোজা করে দাঁড়ান, তাহলে তার ওপর চটে যান এবং বলেন যে, আপনি ঠিকমতো দাঁড়ান, আমি ঠিকই দাঁড়িয়েছি। চটে যাওয়ার কারণও আছে, যিনি সোজা দাঁড়াতে বলেন, তিনি কথার মধ্যে এমন আমিত্বভাব প্রকাশ করেন যে, মাসয়ালা তিনি একাই জানেন আর কেউ জানেন না।

মোটকথা নামাজে দাঁড়ানোটা নিজ ইচ্ছা কিংবা ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়, বরং আমরা যখন আল্লাহর সামনে দাঁড়াই, তখন আল্লাহপাকের নির্দেশ ও নবীজীর তরিকা মোতাবেক দাঁড়াতে হবে। এতে যদি ভুল হয়ে যায়, আর যদি কেউ অনুগ্রহপূর্বক ভুল ধরিয়ে দেন তাতে আরও খুশি হওয়ার কথা।

এ অবস্থায় তার প্রতি চটে যাওয়া মোটেই ঠিক নয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, আমি চা পান করছি। চায়ের পেয়ালায় মাছি পড়ে আছে। কিন্তু আমি তা দেখিনি, এ অবস্থায় আমার চাকর যদি আমাকে তা বলে দেয়, তাহলে কি আমি তার ওপর রাগ হব নাকি তার প্রতি খুশি হব? কাতার সোজা করে না দাঁড়ানো মানে নামাজে মাছি পড়ে যাওয়া, কেউ যদি সতর্ক করে দেয়, তাহলে খুশি হওয়া উচিত।

নামাজের কাতার সোজা করে না দাঁড়ালে পরস্পরে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— ‘তোমরা যখন নামাজে দাঁড়াও সমান হয়ে দাঁড়াও, অন্যথায় আল্লাহতায়ালা তোমাদের অন্তরে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে দেবেন।’

নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় ১১টি সুন্নত:

 ১। উভয় পায়ের আঙুলগুলো কিবলামুখী করে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ানো। বিজ্ঞ ইমামদের গবেষণা মতে, পুরুষদের উভয় পায়ের মধ্যে নিম্নে চার আঙুল, ঊর্ধ্বে এক বিঘত পরিমাণ ফাঁকা রাখা হবে স্বাভাবিক পরিমাণ। (বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১, তিরমিজি ১/৬৬, হাদিস : ৩০৪ সহিহ)। নারীরা উভয় পায়ের গোড়ালি মিলিয়ে রাখবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/২৭০, হাদিস : ২৭৯৪)

২। তাকবিরে তাহরিমার সময় চেহারা কিবলার দিকে রেখে নজর সিজদার স্থানে রাখা এবং হাত ওঠানোর সময় মাথা না ঝোঁকানো। (মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৪৭৯, হাদিস : ১৭৬১ সহিহ, তিরমিজি ১/৬৬, হাদিস : ৩০৪ সহিহ)। ৩। উভয় হাত কান পর্যন্ত ওঠানো। অর্থাৎ উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা কানের লতি পর্যন্ত ওঠানো। (মুসলিম শরিফ ১/১৬৮, হাদিস : ৩৯১)। নারীরা তাদের হাত কাঁধ পর্যন্ত ওঠাবে ও কাপড়ের ভেতর থেকে হাত বের করবে না। (তিরমিজি ১/২২২, হাদিস : ১১৭৩ সহিহ, তাবরানি কাবির ৯/১৪৪, হাদিস : ১৭৪৯৭)

৪। হাত ওঠানোর সময় আঙুলগুলো ও হাতের তালু কিবলামুখী রাখা। (তিরমিজি ১/৫৬, হাদিস : ২৪০ সহিহ, তাবরানি আউসাত ৮/৪৪, হাদিস : ৭৮০১)। ৫। আঙুলগুলো স্বাভাবিক রাখা অর্থাৎ একেবারে মিলিয়ে না রাখা, আবার বেশি ফাঁকও না রাখা। (মুস্তাদরাক হাকেম, হাদিস : ৮৫৬)। ৬। ইমামের তাকবিরে তাহরিমা বলার পর সঙ্গে সঙ্গে মুক্তাদির তাকবিরে তাহরিমা বলা। তবে যেন ইমামের তাকবিরে তাহরিমার আগে মুক্তাদির তাকবিরে তাহরিমার নিঃশ্বাস শেষ না হয়, তা লক্ষ রাখতে হবে। এরূপ হলে মুক্তাদির নামাজ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। (বুখারি ১/১০১, হাদিস : ৭৩৪, মুসলিম, হাদিস : ৪১৪)।

৭। হাত বাঁধার সময় ডান হাতের তালু বাঁ হাতের পিঠের (পাতার) ওপর রাখা। (নাসায়ি শরিফ ১/১০২, হাদিস : ৮২৮)৮। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে বাঁ হাতের কবজি ধরা। (তিরমিজি ১/৫৯, হাদিস : ২৫২, নাসায়ি ১/১০২, হাদিস : ৮৮৬, ইবনে মাজাহ ১/৫৬, হাদিস : ৮১১, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/৩৪৩, হাদিস : ৩৯৪২)। ৯। ওপরের ৮ নম্বরে উল্লিখিত হাদিসের আলোকে বিজ্ঞ ইমামরা বলেন, অবশিষ্ট তিন আঙুল বাঁ হাতের ওপর স্বাভাবিকভাবে বিছিয়ে রাখবে। নারীরা ডান হাতের তালু বাঁ হাতের পিঠের ওপর স্বাভাবিকভাবে রাখবে। পুরুষের মতো শক্ত করে ধরবে না।

১০। নাভির নিচে হাত বাঁধা। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/৩৯০, হাদিস : ৩৯৫৯)। নারীরা তাদের হাত ওড়নার ভেতরে (বুকের ওপর) রাখবে। (তিরমিজি ১/২২২, হাদিস : ১১৭৩)। ১১। ছানা পড়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ৭৭৫, ৭৭৬)।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই