রোজাদারকে ইফতার করানো ফজিলতপূর্ণ ইবাদত

  •  ধর্মচিন্তা ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১১, ২০১৯, ১২:৪৩ পিএম

ঢাকা: কোনো রোজাদারকে ইফতার করানো অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদত এবং সওয়াবের কাজ। কারো জন্য এই সওয়াব অর্জন করা কঠিন বিষয় নয়। এটা শুধু সামর্থ্যবানদের জন্যই নয়, বরং ধনী-গরীব সকলের জন্য এটা সহজ নেকি। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার। ইচ্ছা করলেই আমরা এই সওয়াব অর্জন করতে পারি।

রমজান মাসে রাতের নামাজ তারাবিহ এবং রোজাদারদের ইফতার করানো হলো বিশেষ আমল। এ ব্যাপারে হাদীসে রোজা পালন, তারাবিহ আদায় এবং ইফতার করানোকে গোনাহ মাফের মাধ্যম বলা হয়েছে।

রোজাদারকে ইফতার করানো প্রসঙ্গে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়াব বৃদ্ধির আমল এবং গোনাহ মাফের আমল হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

অন্য একটি হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ হবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে এবং সে ওই রোজাদারের সমান সাওয়াব পাবে। এতে ওই রোজাদারের সাওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না।

সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সবার তো আর রোজাদারকে ইফতার করানোর মতো সামর্থ্য নেই।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে খেজুর, পানি অথবা সামান্য দুধ দিয়ে ইফতার করাবে; মহান আল্লাহ তাকেও এই সাওয়াব দেবেন। (ইবনে খুজায়মা, সুনানে বায়হাকি)

হজরত যায়েদ ইবনে জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাল, তারও রোজাদারের ন্যায় সাওয়াব হবে; তবে রোজাদারের সাওয়াব বা নেকি বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)

যে রোজাদারকে ইফতার করাল, তাকে পানাহার করাল, তাকেও রোজাদারের সমান সাওয়াব দেয়া হবে; তবে তার (রোজাদারের) নেকি বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না। (তাবরানি, মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক)

ইফতারের জন্য কেউ কাউকে দাওয়াত করলে করণীয় কী এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি দাওয়াত গ্রহণের বর্ণনা তার নিজ ভাষায় তুলে ধরা হলো-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তাকে এক মহিলা ইফতারের জন্য দাওয়াত করল, তিনি তাতে সাড়া দিলেন এবং বললেন, ‘আমি তোমাকে (মহিলাকে) বলছি, যে গৃহবাসী কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তাদের জন্য তার অনুরূপ সাওয়াব হবে।

মহিলা বলল, ‘আমি চাই আপনি ইফতারের জন্য আমার কাছে কিছুক্ষণ অবস্থান করুন, বা এ জাতীয় কিছু বলেছে। তিনি বললেন, ‘আমি চাই এ নেকি আমার পরিবার অর্জন করুক। (মুসান্নেফে ইবনে আব্দুর রাজ্জাক)

আল্লাহ তায়ালা অসীম অনুগ্রহ হলো- তিনি বান্দার জন্য কল্যাণে ভিন্ন ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। যেমন তিনি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করার আহ্বান জানিয়ে মহান সাওয়াবের ঘোষণা দিয়েছেন। রোজাদারকে ইফতার করানো ঘোষণাও কল্যাণের আহ্বান।

রোজাদারকে ইফতার করানো ফজিলতপূর্ণ আমল। আর তা হলো যে রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে সারাদিন রোজা পালনকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ নেকি লাভ করবে।

রোজাদারকে ইফতার করালে তার প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা নিজের পক্ষ থেকে প্রদান করবেন, রোজাদারের পক্ষ থেকে নয়। এ কারণেই রোজাদারের কোনো নেকি হ্রাস করা হবে না। এটা বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ।

ইফতারের দাওয়াত গ্রহণ করা বৈধ ও কল্যাণের কাজ। কোনো অজুহাতে বা নেকি কমে যাওয়ার আশংকায় ইফতারের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা অনুচিত।

আবার কেউ যদি কোনো গরীব রোজাদারকে ইফতারের জন্য আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করে; তাতে সে ওই টাকায় ইফতারও করল; আবার কিছু বাচিয়ে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হলো; এটাও ইফতার করানোর অন্তর্ভূক্ত হবে। আর গরীব ব্যক্তিও আর্থিকভাবে উপকৃত হবে।

ইফতারের দাওয়াত যদি অসহায় গরীব-দুঃখীর জন্য হয় তবে সেখানে ধনী ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ করা ঠিক নয়।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা রোজাদারদেরকে পারস্পরিক দাওয়াত ও সদাচরণ বিনিময়ের তাওফিক দান করুন। অস্বচ্ছল, গরীব-দুঃখীর মাঝে ইফতার ও ইফতার করার জন্য অর্থ দান করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এসআই