যুগ বদলে দিচ্ছে রোমিও সংস্কৃতিতে

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬, ০৪:২৩ পিএম

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপস, মেসেঞ্জার, ফেসবুক, টুইটার ইমোসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন হাতের মুঠোয়। জীবনের দৈনন্দিন নানান ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির উপাদানগুলো। সেখানে বাদ থাকছে না বন্ধুত্ব, সম্পর্ক, প্রেম-ভালোবাসাও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দুপরে কথা হচ্ছিল বেশ কজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। ক্লাসের পর গল্প বা আড্ডারত শিক্ষার্থীদের মোটামুটি সবাইকেই দেখা গেল মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। এখনকার রোমিও কালচার নিয়ে আলাপে তারা জানালেন, ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল জগতের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়েছে। সম্পর্কগুলো এখন এভাবেই তৈরি হচ্ছে।

একজন শিক্ষার্থী বলছেন, এ যুগে আমাদের ফেসবুক বা ফোন আছে। কারও সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয়, পরে দেখা সাক্ষাত হয়। পরে মোবাইল ফোনে কথা বলা যায়। তবে ফেসবুক বা ইমোতে দেখা যায় অল্প খরচে অনেকক্ষণ কথা বলা যায়।

আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা তো অপেরা মিনি, ইউসিএ ব্রাউজার, মেসেঞ্জার, ভাইবার, স্কাইপ ব্যবহার করি। মোবাইলের মাধ্যমে। আর এসব মাধ্যমে এখন ভালবাসার কথাগুলো জানানো হচ্ছে, জানান এই তরুণেরা। এ বিষয়ে কি ভাবনা জুলিয়েটদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জলি । তিনি বলেন, এখন মোবাইল বা ইন্টারনেটে সামাজিক মাধ্যমেই সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে এবং সেভাবেই ধরে রাখা হচ্ছে। কারও সাথে আলাপের পরপরই এখন যে প্রশ্নটা শুনতে হয় তাহলো আপনার মোবাইল নম্বর কত? কিংবা ফেসবুক আইডিটা কি?

বিষয়টি অনেকসময় বিড়ম্বনাও তৈরি করে। আরেকজন ছাত্রী বুশরা তেমনটাই বলছেন। এসব মাধ্যমে প্রকৃত রোমিওর খোঁজ পাওয়ার বিষয়েও সন্দিহান তিনি। বুশরা বলেন, অনেকসময় কেউ হয়তো হুট করে ফেসবুক আইডি চেয়ে বসে। তাকে হয়তো দেয়াও যাচ্ছে না, আবার এড়ানোও যাচ্ছে না। বিষয়টি খুবই বিরক্তিকর। অনেকসময় ফেসবুকে একজন হয়তো একসঙ্গে অনেকের সাথেই ফ্লার্ট করে। ফলে এখানে ধোঁকা দেয়ার সুযোগ থাকছে।

এই আস্থাহীনতার বিষয়ে তরুণ রোমিওরা কি বলছেন? জানতে চাইলে কয়েকটি তরুণ বলে, অনেক ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটছে। অনেক সম্পর্ক দ্রুত ভেঙেও যাচ্ছে বলে জানান কেউ কেউ। পুরনো দিনে রোমিওরা মেয়েদের স্কুলের সামনে কিংবা বাড়ির সামনের রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতো। আর এখন ফেসবুকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা খোশগল্প করা যাচ্ছে। ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে সরাসরি মুখদর্শন করা যাচ্ছে। মোবাইলেই আছে এসব প্রযুক্তিগুলো।

ফলে এখনকার রোমিওরা বলছেন, ওসব এখন আর কেউ করে না। ওগুলো সেকেলে। এখন ঘরে বসেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন মনের খবর পৌঁছানোর জন্য প্রেমিক পুরুষরা বেছে নিতেন চিঠি। প্রাচীন কালে পায়রার মাধ্যমে পত্র পাঠানোর ঘটনাও সবার জানা। তাই পুরনো আমলের গল্প, উপন্যাস, গান, কবিতা চলচ্চিত্র সর্বত্রই ছিল চিঠিপত্র নিয়ে ব্যাকুলতা। অনেকসময় চিঠি চালাচালির জন্য পত্রবাহক খুঁজে বের করা হতো।

আবার কখনো কখনো বাড়ির প্রাচীর টপকে চিঠি আদান প্রদান করতে গিয়ে মুরুব্বি কারও হাতে পড়ে ঘটতো আরেক কাণ্ড। এমনই এক ঘটনার কথা স্মরণ করে লেখক এবং প্রাক্তন অধ্যাপক মোর্শেদ শফিউল হাসান বলছিলেন, আমাদের সময় চিঠির মাধ্যমেই আমরা মনের কথা জানাতাম। হয়তো চিঠি ছুড়ে মেরেছি আর তা গিয়ে পড়েছে পরিবারের অন্য কারও হাতে। সুতরাং ঝুঁকিটা বেশি ছিল তাই গভীরতাও হয়তো ছিল অনেক। কিন্তু এখন আর তা নেই। ফলে দ্রুত সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে। আবার নতুন সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে।

এই পরিবর্তনের বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলছেন, বর্তমান সময়ে তরুণদের হাতে প্রযুক্তি আর চোখের সামনে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলানোর হাতছানি। ফলে না চাইলেও ধীরে ধীরে এ পরিবর্তনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

অধ্যাপক রহমান বলেন, প্রযুক্তির উদ্ভাবন আর তার সাথে সাথে আমাদের সমাজ যখন আধুনিক সমাজের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে তখন এর একটি প্রেক্ষাপট থাকে। আপনি যখন মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে চলে গেছেন , সারা পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ বেড়েছে, বিভিন্ন প্রযুক্তি গ্রহণ করেছেন। এইসময় আমাদের আইকন হচ্ছে পশ্চিমা আধুনিক সমাজ। সুতরাং প্রযুক্তিকে আমরা যত তাড়াতাড়ি গ্রহণ করি তার ব্যবহারকে ঘিরে আধুনিক প্রথা বা মূল্যবোধ প্রবেশ করছে। সেটি চাইলেও ঘটবে না চাইলেও ঘটবে। এসব বিষয় একসময় রীতিতে পরিণত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম খরচে কিংবা বিনে পয়সায় কথা বলা যায় বলে তরুণদের কাছে এসব প্রযুক্তি দিন দিন প্রিয় হয়ে উঠছে। এর সাথে সাথে রয়েছে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিকীকরণ প্রভাব আর মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য। ফলে নতুন নতুন প্রযুক্তি আর অ্যাপলিকিশন্স বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা। আর তাতে ব্যস্ত রাখছে হালের রোমিওদের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই