নিকন নাকি ক্যানন, কোন ক্যামেরা ভালো?

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০১৮, ০৫:২৯ পিএম

ঢাকা : নিকন নাকি ক্যানন? ক্যামেরার জগতে এই দুই নাম সব থেকে যেমন পরিচিত, তেমনি এই দুই ক্যামেরা নিয়ে তর্ক বিতর্কেরও শেষ নেই। কোনটা ভালো আর কোনটা বেশি ভালো তাই নিয়ে সব সময়ই রয়েছে কিছু ধারণা। আসুন জেনে নেই এই দুই ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে কী।

ক্যানন বনাম নিকন : যেকোনো দুটো পণ্যের মাঝে পার্থক্য করার সময় সেগুলোর কার্যক্ষমতাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ক্যানন এবং নিকন, উভয়ের সার্বিক অবস্থান বেশ শক্তিশালী। চাইলেই একটির চেয়ে অন্যটিকে প্রাধান্য দেওয়ার তেমন একটা সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, অটো-ফোকাস, নয়েজ-হ্যান্ডেলিং, সেন্সর, মেগাপিক্সেল, ফটো পার আওয়ার, এলসিডি, ফ্ল্যাশ, ভিডিও কোয়ালিটির মতো প্রধান প্রধান ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনাযোগ্য।

অটো-ফোকাস : অন্যান্য ব্র্যান্ড থেকে ক্যানন এবং নিকনের চাহিদা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ, ব্র্যান্ড দুটোর ক্যামেরার সঙ্গে বেশ পুরনো লেন্সের সামঞ্জস্য বজায় রাখার সক্ষমতা। ক্যাননের EOS সিরিজটি প্রবর্তিত হয় ১৯৮৭ সালে। অপরদিকে, নিকনের F-Mount সিরিজটি ১৯৫৯ সালে। আপনি যেকোনো EOS EF অথবা এফ-মাউন্ট সিরিজের লেন্স আপনার ক্যামেরাতে ব্যবহার করতে পারবেন, সেটি যত পুরনোই হোক।

তবে তাদের মধ্যে অন্যতম পার্থক্য তৈরি হয় অটো-ফোকাসের ক্ষেত্রে। ক্যাননের বেলায় ইওএস ইফ সিরিজের সব লেন্সেই অটো-ফোকাস রয়েছে। কিন্তু, নিকনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র AF-S’ই অটো-ফোকাসের সুবিধা দিয়ে থাকে।

নিকন তাদের এন্ট্রি-লেভেলের ক্যামেরাগুলোকে সস্তা এবং হালকা করার লক্ষে ক্যামেরা-বডি থেকে অটো-ফোকাস মোটর বাতিলের ঘোষণা দেয়। যদি কেউ নিকনের D40, D40X, D60, D3000, D3100, D5000 এবং D5100 মডেলের ক্যামেরাগুলো অটো-ফোকাস সহ ব্যবহার করতে চায়, তাহলে অবশ্যই এএফ-এস সিরিজের লেন্সগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে সে সুবিধা গ্রহণ করতে হবে।

ক্রপ-ফ্যাক্টর : আপনি যদি ক্যামেরার ক্রপ-ফ্যাক্টরের ব্যাপারে অবগত হয়ে থাকেন, তাহলে জানতে আগ্রহী হবেন যে, ক্যাননের এন্ট্রি-লেভেলের ডিএসএলআরগুলোর সেন্সর অন্যান্য ব্র্যান্ডের ক্যামেরা থেকে একটু বেশিই ছোট। যেখানে নিকনের এন্ট্রি-লেভেলের ক্যামেরাগুলোতে ক্রপ-ফ্যাক্টর ১.৫, ক্যাননের ক্ষেত্রে তা ১.৬। অর্থাৎ, আপনি যদি আপনার ৫০মি.মি প্রাইম লেন্সটি কোন ক্রপ-ফ্রেমে ব্যবহার করতে চান, তাহলে ৭৫মি.মি এর জায়গায় ৮০মি.মি পাবেন, যা অবশ্য তেমন একটা পার্থক্য সৃষ্টি করে না।

এলসিডি : ফটোগ্রাফারদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফটোগ্রাফির কালার, হোয়াইট ব্যালেন্স, লাইভ ভিউ/মুভি মুডে দৃশ্যাবলী দেখা সহ নানান গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এলসিডির যথার্থতার ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু  নিকনের D600, D800, D800E এবং D4 মডেলের জনপ্রিয় ফুল-ফ্রেম ক্যামেরাগুলোর এলসিডিতে অতিরিক্ত হলদেটে ভাবের কারণে অধিকাংশ প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারই অসন্তুষ্ট। এছাড়াও নিকনের অটো-ব্রাইটনেস নিয়ন্ত্রণ ক্যাননের অটো-ব্রাইটনেসের চেয়ে খারাপ। পাশাপাশি ক্যাননের এলসিডির ওপরের অংশে ব্যবহৃত প্ল্যাস্টিক/গ্লাসের অ্যান্টি-রিফ্লেক্টেড আবরণ আউটডোরের অতি-সূর্যরশ্মির সময়ও এলসিডির মাধ্যমে লাইভ ভিউ/মুভি মুডে দৃশ্যাবলী দেখতে সাহায্য করে। কিন্তু নিকনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আশেপাশের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।

ভিডিও কোয়ালিটি : আকারে ছোট, হালকা এবং সহজে ব্যবহার যায় বিধায় বর্তমানে ভিডিওগ্রাফির জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডিএসএলআরের ব্যবহার করা হয়; অর্থাৎ, প্রধান প্রধান ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে দুটো ব্র্যান্ডের ক্যামেরাগুলোর ভিডিও কোয়ালিটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ভিডিওগ্রাফির জন্য ক্যানন সবসময়ই ব্যবহারকারীদের প্রশংসা কুড়িয়ে এসেছে। তাদের ক্যামেরাগুলোতে ব্যবহৃত হাইব্রিড অটো-ফোকাস সিস্টেম রেকর্ডিংয়ের সময় অবজেক্টকে ক্রমাগত স্বয়ংক্রিয়ভাবে রি-ফোকাসিংয়ের কাজে বেশ দক্ষ। এছাড়াও শুধুমাত্র ভিডিওগ্রাফির দিকে ফোকাস রেখে তৈরী লেন্সও বাজারে পাওয়া যায়। এন্ট্রি লেভেল থেকে শুরু করে প্রায় সবধরনের ক্যামেরাতে ভিডিও রেকর্ডিং প্রযুক্তি বেশ উন্নত বিধায়, ক্যানন এক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে।

অন্যদিকে, ২০১২/১৩ এর দিকেও নিকনের অধিকাংশ ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরাগুলোতে ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সময় অটো-ফোকাসিংয়ের সুবিধা না থাকলেও পরবর্তীতে তৈরী প্রায় অধিকাংশ ক্যামেরাতে রেকর্ডিং চলাকালে অটো-ফোকাসিংয়ের সুবিধা রয়েছে। এমনকি নিকনের কিছু কিছু ক্যামেরায় ভিডিওগ্রাফিতে ফ্রেম রেট ৬০ fps ব্যবহার করা হয়, যেখানে প্রায় একই দামের ক্যাননের ক্যামেরাগুলোতে ফ্রেম রেট ৩০ fps।

অন্যান্য : ক্যাননের অটো হোয়াইট ব্যালেন্স নিয়ে অধিকাংশ ব্যবহারকারীর অসন্তুষ্টি রয়েছে, কিন্তু অল্প খরচে বেশ কার্যক্ষম লেন্সের জন্য ক্যানন প্রসিদ্ধ। তাদের এল-সিরিজের লেন্সগুলো দামে বেশি হলেও, এতে আল্ট্র্যাসনিক মোটরের ব্যবহারের অটো-ফোকাসিংকে আরো বেশি দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং নিখুঁত করে তুলেছে। অপরদিকে, নিকন ক্যামেরাগুলো নয়েজ-হ্যান্ডেলিংয়ে বেশ প্রশংসার দাবি রাখলেও, তাদের ম্যানু সিস্টেমের ডিজাইন বেশ জটিল এবং দুর্বল।

সোনালীনিউজ/আরজে